Take a fresh look at your lifestyle.

আশার আলো ক্যানসার চিকিৎসায়, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন হবে ৭০৩ কোটিতে

11

বরিশাল হেলথ ইনফো ডেক্স:
মারণব্যাধি ক্যানসার। প্রথম পর্যায়ে এই রোগ শনাক্ত করা না গেলে আক্রান্ত রোগীকে বাঁচানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা আধুনিক চিকিৎসা পান না বলে হেরে যান মৃত্যুর কাছে। বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকার ক্যানসার চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যাধুনিক সাইক্লোট্রন (শরীর থেকে ক্যানসারের জীবাণু নির্মূলের যন্ত্র) ও পিইটি-সিটি (ক্যানসার শনাক্তে রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার যন্ত্র) সুবিধা স্থাপনের মাধ্যমে ক্যানসার রোগীদের জন্য বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক এবং থেরাপিউটিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি বৃহৎ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগটি শুধু ক্যানসার চিকিৎসার মান উন্নয়ন করবে না, তা দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের মানুষ আরও সহজে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে আধুনিক চিকিৎসা সেবা পাবে, যার ফলে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপও কমবে।

প্রকল্পটির শিরোনাম ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যাল্যায়েড সায়েন্সেস (ইনমাস) ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে সাইক্রোট্রন ও পিইটি-সিটি এবং ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিকেল ফিজিক্স (আইএনএমপি) সাভারে সাইক্রোট্রন সুবিধাদি স্থাপন’।

প্রকল্পটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। এর আনুমানিক বাজেট ৭০৩ কোটি টাকা, যার মাধ্যমে অত্যাধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে, যা ক্যানসার চিকিৎসায় উচ্চ-বিশেষজ্ঞ সেবা দেবে।
বর্তমানে দেশে কেবল দুটি হাসপাতাল সাইক্লোট্রন ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যানসার চিকিৎসা দেয়। এর মধ্যে একটি সরকারি এবং অপরটি বেসরকারি হাসপাতাল। এই সীমিত পরিসরের কারণে অধিকাংশ রোগী আধুনিক ক্যানসার চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন এবং তারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও চাপ সৃষ্টি করে।

প্রকল্পটির লক্ষ্য
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং সাভারে সাইক্লোট্রন মেশিন ও পিইটি-সিটি স্ক্যানার স্থাপন করা হবে, যা ক্যানসার শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার ক্ষমতা অনেক বাড়াবে। সাইক্লোট্রন মেশিন কৃত্রিম রেডিওআইসোটোপ তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা পিইটি-সিটি স্ক্যানের জন্য ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে থাইরয়েড, যকৃত, কিডনি এবং হাড়ের ক্যানসার নির্ণয়ে। এই যন্ত্রপাতি দেশে স্থানীয়ভাবে রেডিওআইসোটোপ উৎপাদন করতে সক্ষম হবে, যা ক্যানসার চিকিৎসার খরচ এবং প্রতীক্ষার সময় কমাবে।
প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো উচ্চতর নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যানসারের সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসা সেবা উন্নত করা। এতে রেডিওআইসোটোপ উৎপাদন করা হবে, যা ক্যানসারের সঠিক নির্ণয় এবং চিকিৎসায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি, প্রকল্পটি নিউক্লিয়ার অনকোলজি, মেডিক্যাল ফিজিক্স, এবং নিউক্লিয়ার মেডিক্যাল টেকনোলজিতে দক্ষ পেশাজীবী তৈরি করবে, যাতে এই সুবিধাগুলির দীর্ঘমেয়াদি টেকসই থাকা নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশে বছরে দুই লাখ ক্যানসার রোগী শনাক্ত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছেন। প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ নতুন ক্যানসারের রোগী শনাক্ত হন। এত বিপুল সংখ্যক রোগীর বদলে বর্তমানে দেশে মাত্র দুটি সাইক্লোট্রন মেশিন এবং আটটি পিইটি-সিটি স্ক্যানার রয়েছে, যাতে রোগীদের অত্যন্ত সীমিত পরিসরে সেবা দিতে হচ্ছে। এর ফলে অনেক রোগীকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়।
এখন পর্যন্ত এ ধরনের আধুনিক চিকিৎসা সুবিধাগুলি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে স্থানীয় অঞ্চলে, যেখানে ক্যানসার সেবা প্রায় নেই। নতুন সাইক্লোট্রন সুবিধাগুলি ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং সাভারে স্থাপন হলে রোগীরা দ্রুত এবং সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা।

প্রকল্পের অগ্রগতি
গৃহীত এ প্রকল্পের বাস্তবায়নে গত নভেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে পরমাণু শক্তি কমিশন সূত্র। জানা গেছে, ময়মনসিংহ এবং চট্টগ্রামে সাইক্লোট্রন ও পিইটি-সিটি ইনস্টলেশনের জন্য ছয়তলা ভবন নির্মাণ কাজ শেষের দিকে এবং সাভারে ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিক্যাল ফিজিক্সের জন্য ১০ তলা ভবনও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সরকার এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যেমন রেডিওকেমিস্ট্রি মেশিন, অটো এফডিজি ইনজেক্টর, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করেছে, যদিও কিছু আন্তর্জাতিক সরবরাহে বৈদেশিক মুদ্রার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকার দ্রুত এই সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য কাজ করছে।

২০২৬ সালের মধ্যে আট বিভাগীয় শহরে ক্যানসার হাসপাতাল
দেশে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য যেসব সেবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা পূরণে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হবে, যা ক্যানসার চিকিৎসা আরও সহজলভ্য এবং সাশ্রয়ী করবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম. মঞ্জুর আহসান বাংলানিউজকে বলেন, সাইক্লোট্রন ও পিইটি-সিটি সুবিধার এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি কেবল ক্যানসার রোগীদের সময়মতো সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নয়, বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.