Take a fresh look at your lifestyle.

নিবিড় পরিচর্যার ৫০০ শয্যা পড়ে আছে অবহেলায়

মহাখালীর ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল

১০৭

হেলথ ইনফো ডেস্ক :
প্রাণঘাতী ডেঙ্গু, বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের রোগী, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের প্রাণ বাঁচাতে প্রয়োজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ চরম সংকটের কারণে বেশিরভাগ মুমূর্ষু রোগী আইসিইউর ফাঁকা শয্যা পাওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কিন্তু রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৫০০ শয্যার আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা পড়ে আছে অবহেলায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় এগুলো চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এভাবে ঋণের টাকায় কেনা শতকোটি টাকার মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে অসংখ্য রোগী আইসিইউ সেবা বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। অন্যদিকে কভিডকালীন বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রতিষ্ঠানে এলেও প্রশাসনিক জটিলতায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানীর মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের পাশে ২২ বিঘা জমির ওপর ছয়তলা মার্কেট ভবন নির্মাণ করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সেই মার্কেট আর চালু করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে আঘাত হানে মহামারি কভিড-১৯। দেশজুড়ে রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সরকারকে। দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। তাই কভিডকালীন মার্কেট ভবনটিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ডিএনসিসি ও সেনাবাহিনীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় এক হাজারের বেশি শয্যার কভিড ডেডিকেটে হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। অবকাঠামো সিটি করপোরেশনের, জনবল ও যন্ত্রপাতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল সেনাবাহিনী। কভিড মহামারি শেষে হাসপাতালটিকে একটি জেনারেল হাসপাতালে পরিণত করে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে ডেঙ্গুর উপদ্রব সম্প্রতি বছরগুলোয় বাড়লে ওই হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করা হয়। হাসপাতালে ২১২ শয্যার আইসিইউ, ২৮৮ শয্যার এইচডিইউ, জরুরি বিভাগে বিশেষ শয্যা ৫০টি এবং ডায়ালাইসিস শয্যাসহ এক হাজারের বেশি শয্যা রয়েছে। চলতি মৌসুমে ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৪ হাজার ২৫২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে এ পর্যন্ত ২৪ জনের। এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮৭ রোগী। সোয়া চার হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নেওয়া হাসপাতালটিতে জনবলের অভাবে আইসিইউ এবং এইচডিইউ সেবা বন্ধ। এ নিয়ে কারও ভ্রুক্ষেপও নেই।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৫৪টি শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে ২১২টি আইসিইউ শয্যা, এইচডিইউ শয্যা ২৮৮টি এবং সাধারণ শয্যা ৫৫৪টি। গত সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ৩৫৫ শয্যায় রোগী ভর্তি রয়েছে, আর ৬৯৯টি শয্যা ফাঁকা। এখন রোগী আছে সাধারণ শয্যায় ২৫১ জন, এইচডিইউতে ৬৪ জন এবং আইসিইউতে ৪০ জন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ নেই। রাজধানীসহ সারা দেশে মশার উপদ্রব চরমে। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ে এ পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি মানুষকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সরকারি হিসাবে এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩১৩ জনের। মৃত ব্যক্তিদের অধিকাংশ হাসপাতালে ভর্তির পর দ্রুত মারা যাচ্ছেন। এ নিয়ে সরকার ও চিকিৎসকরা রোগীর ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে ডেঙ্গু সচেতনতা প্রসঙ্গে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বিপরিতমুখী বক্তব্য রোগীদের বিভ্রান্ত করছে।

ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির পর সরকারের তরফ থেকে রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসকের দারস্থ হলে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। আবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, তারা কারও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশা মারতে পারবেন না। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হচ্ছেন না। সংকটাপন্ন অবস্থায় ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। আবার রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে রেখেও দেওয়া যাচ্ছে না চিকিৎসা, কারণ প্রয়োজন হচ্ছে আইসিইউর। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সীমিত আইসিইউ শয্যা ফাঁকা না থাকায় শংকটাপন্ন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশের পক্ষে ব্যয়বহুল এ বিশেষ চিকিৎসা বেসরকারি হাসপাতালে চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারি হাসপাতালে বসেই গুনতে হচ্ছে মৃত্যুর প্রহর।

অথচ রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মহাখালী ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে তিনশর বেশি আইসিইউ এবং এইচডিইউ শয্যা রয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটে সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় সরকারের সীমাহীন গাফিলতি ও অবহেলায় পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ শয্যা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ হাসপাতালে ৭০ জন মেডিকেল অফিসার ও ২৩ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট রয়েছেন। নার্সের সংখ্যা ৬০ জন। এদের দুই বা তিন শিফটে ভাগ করলে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া ভীষণ কষ্টসাধ্য। চিকিৎসক, নার্স এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের এই হাসপাতালে স্থায়ী পদ না থাকায় প্রেশনে পদায়ন করা হয়। স্থায়ী পদায়ন না হওয়ায় অনেকে এখানে এলেও পরে আর থাকতে চান না। ফলে জটিলতায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. আসিফ হায়দার কালবেলাকে বলেন, ‘হাসপাতালের প্রায় সব শয্যার সঙ্গে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হলে রোগীদের সেবার সুযোগ রয়েছে। হাসপাতালের ষষ্ঠতলায় আইসিইউর ৯টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে দুই ও তিন নম্বর আইসিইউ ইউনিট চালু আছে। বাকি ইউনিট জনবল না থাকায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় লোকবল পেলে সেগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হবে।’

ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল লতিফা রহমান বলেন, ‘রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ভালো অবকাঠামো থাকার পরও স্থায়ী লোকবলের সংকটে চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। স্থায়ীভাবে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য লোকবল এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ হাসপাতালটি সম্পূর্ণভাবে চালু করা গেলে আরও বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া যাবে।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বিপুল জায়গার পাশাপাশি অনেক যন্ত্রপাতি পরে আছে। কিন্তু জটিলতার কারণে সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমরা হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করার লক্ষ্যে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় স্থায়ী লোকবল চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। যাতে করে ৫০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করতে পারি।
সূত্র : কালবেলা

Leave A Reply

Your email address will not be published.