Take a fresh look at your lifestyle.

এন্টিবায়টিক রেজিজট্যান্স-মানবজাতি কি ধ্বংসের মুখে?

১৪০

ডা: সোনিয়া আলম মৌ :
মানবজাতিকে মহামারির অন্ধকার থেকে রক্ষা করতে বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং যে অ্যান্টিবায়োটিকের জন্ম দিয়েছিলেন, সেই আশ্চর্য আবিষ্কারই আজ আমাদের জন্য এক নতুন সংকটের নাম। ফ্লেমিং এর আবিষ্কৃত পেনিসিলিন লক্ষ সৈনিকের জীবন বাচিয়ে ঘুরিয়ে দিয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতি প্রকৃতি। কিন্তু সেই অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধ—অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স—এখন আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ঝুলছে এক নিঃশব্দ বিপদের ছায়া।
অসচেতন ব্যবহারের ফলে এই প্রতিরোধ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সামান্য সংক্রমণও হয়ে উঠছে প্রাণহানির কারণ।

প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ১৮–২৪ নভেম্বর পালিত হয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সপ্তাহ।
এ বছরের বার্তা যেন আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়—

“এখনই পদক্ষেপ নিন: আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, আমাদের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন।”

এই বার্তাটি নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও অত্যন্ত যথার্থ। সম্প্রতি IEDCR থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কার্যকারিতা দেখাতে পারেনি।

অ্যান্টিবায়োটিকের অসচেতন ও অতিরিক্ত ব্যবহার জীবাণুর প্রতিরোধক্ষমতা এমন এক বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে দিয়েছে, যা এখন দেশের অন্যতম বড় জনস্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
যে ওষুধ একসময় আমাদের জীবনরক্ষার শেষ আশ্রয় ছিল, সেটিই আজ ক্রমে হারাচ্ছে তার শক্তি ও কার্যকারিতা।

রেজিস্টান্স তৈরি হওয়ার মানুষ্য সৃষ্টি প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালসের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার যেমন ভাইরাল সংক্রমণ (সাধারণ সর্দি, ফ্লু) বা অন্যান্য সংক্রমণ যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক দরকার নেই সেখানেও ব্যবহার করা, রোগী সুস্থ বোধ করার পর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স বন্ধ করে দেওয়া।

এর ফলে দুর্বল ব্যাকটেরিয়াগুলো মরে যায়, কিন্তু শক্তিশালী ও রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়াগুলো বেঁচে থাকে। এর পাশাপাশি দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বা সংক্রমণ প্রতিরোধে কৃষি, মাছ ও পশুপাখি পালনে অনেকদিন ধরেই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে।

তাছাড়া মানুষের হাসপাতাল বা সামাজিক চলাচলে দুর্বল স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবিধির কারণে রেজিস্ট্যান্ট জীবাণু দ্রুত ছড়ায়।

বিশ্বের সব দেশে প্রায় ২৫ বছর ধরে ‘অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ’ চালু হলেও, আমাদের দেশে এখনো এটি চালু হয়নি। অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ হলো একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক, নিরাপদ এবং কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর বিস্তার কমানো, রোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অ্যান্টিবায়োটিকের দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা বজায় রাখা।

হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ফার্মেসিতে অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রাম চালু করা হলে অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহার, অপব্যবহার এবং অতিব্যবহার কমতে বাধ্য। তবে, গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট ছাড়া ফার্মেসিতে অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ চালু করা অসম্ভব। সরকার সম্প্রতি ৭০০ সরকারি ফার্মেসি চালু করার এবং সেগুলোয় গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার তখন চাইলে সেসব ফার্মেসিতে অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ চালু করতে পারে।

অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ প্রোগ্রামের একটি অন্যতম টুলস হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যান্টিবায়োটিকের ‘AWaRe (Access, Watch, Reserve)’ শ্রেণিকরণ পদ্ধতি এবং এ শ্রেণিকরণ বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসায় সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক নির্ধারণ করা

তাই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক স্টুয়ার্ডশিপ চালু করতে হবে এবং AWaRe শ্রেণিকরণ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো, উন্নত রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক রোগী থেকে অন্য রোগীতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু সংক্রমিত না হয়। এসব ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ভীষণ পস্তাতে হবে কোনো সন্দেহ নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.