Take a fresh look at your lifestyle.

আরও ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার

১৮৪

বরিশাল হেলথ ইনফো ডেস্ক :
নতুন করে আরও ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হবে ১৩ হাজার ৯৮৯ জনবল। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। এটি বাস্তবায়ন হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার পরিধির পাশাপাশি মান বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ বুধবার (২০ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীর বিএমআরসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আখতারুজ্জামান এ তথ্য দিয়েছেন। তবে এগুলো চালুর বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি তিনি।

‘কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিকল্পনার সময় হিসাব ছিল প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য অথবা ৩০ মিনিট হাঁটার দূরত্বে একটি ক্লিনিক থাকবে। কিন্তু দেশের বাস্তবতায় সেটি সব জায়গায় সম্ভব হয়নি। পাহাড়ি এলাকা, হাওর কিংবা চর অঞ্চলের কোনো কোনো জায়গায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক রয়েছে। ফলে সেখানকার কর্মীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই ঘাটতি পূরণেই নতুন করে কমিউনিটি ক্লিনিক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আবেদন নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা জমি দিতে আগ্রহী, তারা নোটারি করা ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে আন্ডারটেকিং দিলে আমরা তাদের আবেদন অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকা করছি। জমি পাওয়া গেলে দ্রুত সেই এলাকায় নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হবে। সব মিলিয়ে আমাদের সামনে একটা বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

এসব প্রতিষ্ঠানে নতুন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে নতুন করে ১৩ হাজার ৯৮৯ জন জনবল নিয়োগের জন্য রাজস্ব বাজেট থেকে ৪২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ সময় শহরাঞ্চলেও কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এক্ষেত্রে জমি পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

তিনি বলেন, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে ইতোমধ্যে ১২০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই সব কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া আরও ২০০ কোটি টাকার ওষুধ কেনার প্রক্রিয়া চলছে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন মো. আখতারুজ্জামান। জানান, কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করেন জনস্বাস্থ্যসেবার জন্য আলাদা সুবিধা থাকা জরুরি।

 

৯২ শতাংশ নাগরিক চান স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সরকার বহন করুক। আর ৯৭ শতাংশ মানুষ চান এসব সেবা হোক সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এসব চাহিদা পূরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে কমিউনিটি ক্লিনিক।

বিএনপি সরকারের সময় কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এটি সরকারের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।

অনুষ্ঠানে নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন ট্রাস্টের পরিচালক (মাঠ প্রশাসন) ডা. আসিফ মাহমুদ। বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট এখন শুধু সেবা দেওয়ার জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে চায় না, বরং একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তুলতে চায়। এজন্য নিজস্ব ভবন নির্মাণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সিএইচসিপি ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ পাবেন। একইসঙ্গে সারাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো পুনঃনির্মাণ ও মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল রেফারেল সিস্টেম চালু করা হবে, যাতে একজন সেবাগ্রহীতা কোথায়, কী ধরনের চিকিৎসা পেয়েছেন তা সহজে ট্র্যাক করা যায় এবং সঠিক সময়ে সঠিক সেবা নিশ্চিত করা যায়।

কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (সিএইচসিপি) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শমূলক সেবা দেওয়া। স্বাভাবিকভাবেই এখানে বড় ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক নেই। সাধারণত প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন বা এন্টাসিড জাতীয় কিছু ওষুধ দিয়েই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
প্রসূতির সেবার ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে কর্মরত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সিএইচসিপিরা নিরাপদভাবে স্বাভাবিক ডেলিভারি করাতে পারেন।
প্রসঙ্গত, সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৪ হাজার ৪২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৩৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক হতে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ জন সেবাগ্রহীতা সেবা গ্রহণ করে থাকে। সারাদেশে প্রতিদিন প্রায় চার লাখ ৯০ হাজার জনকে সেবা প্রদান করে। প্রতি বছরে কমিউনিটি ক্লিনিক হতে প্রায় ১৬ কোটি মানুষ সেবা গ্রহণ করেন।
সূত্র : মেডিভয়েস

Leave A Reply

Your email address will not be published.