নিজস্ব প্রতিবেদক :
অযত্ন অবহেলায় বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ রোগ নির্নয়ের মেশিন অচল হয়ে পরে আছে। একশ কোটিরও বেশি টাকা মূল্যের কিছু যন্তপাতি মেরামত যোগ্য হলেও এর জন্য চিঠি চালালালিতে পার হয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এর ধকল পোহাতে হচ্ছে সাধারন রোগীদের। হাসপাতাল কতৃপক্ষ এসব মেশিন অচলের কারন উদঘাটন করবে বলে জানিয়েছে।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের সিয়ার্ম মেশিনটি হাসপাতালর দেয়া হয় ২০১৫ সালে। এটি স্থাপনে স্থান নির্বাচনসহ অনুসঙ্গিক কাজে ব্যয় হয়ে যায় ৬ বছর। এর পর এ মেশিনের দরপত্র ও সরবরাহ নিয়ে জটিলতা হয়। সেই থেকে অযত্ন অবহেলায় এটি পরে আছে। একইভাবে সিটিস্ক্যান মেশিনে পানি পড়ে নস্ট হয়। কেন পানি পড়লো তা খুজতে সময় পার হয়েছে দু বছর। এখন মেশিনটির অবস্থা সম্পুর্ণ অচল। এমআরআই মেশিনটি চালু হবার ৬ মাস পর থেকে অচল হয়ে নষ্টের দিকে। সিরাম মেশিনটি চালুর পর এর রি-এজেন্ট অন্য কোম্পানির হওয়ায় এটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোজিস্ট বাবুল আখতার জানান, এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ ভারি মেশিনগুলো অচল হবার পর আমরা মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু উত্তর আসেনি। এগুলো যে অকশনে দেবো তাও করতে পারছিনা। দামি এসব মেশিনিগুলো ক্রমেই আবর্জনায় পরিনত হচ্ছে। অনেক মেশিন অতি পুরোনো আবার অনেক মেশিন নতুন। কিন্তু অচল সবগুলোই।
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে রোগীদের সেবা নিশ্চিতে সরকার বিভিন্ন সময়ে রোগ নির্ণয়ের ৪৯৬ টি মেশিন স্থাপন করে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে এগুলো আর সচল থাকেনি। বর্তমানে এর মধ্যে ২৪২ টি অচল। এর আবার ১২৮টি মেরামতযোগ্য হলেও নির্দেশনা না থাকায় তা মেরামত করা যাচ্ছে না। অযত্ন অবহেলা কিংবা আদৌ ব্যাবহার না করার কারনে শতকরা ৫০ ভাগ মেশিন এখন অচল হয়ে পড়ে আছে।
হাসপাতাল কতৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ি বর্তমানে একটি এয়ার্ম, একটি সিরাম, দুটি সিটি স্ক্যান, একটি এমআরআই, একটি অটোক্লেভ, ১২টি ডেন্টাল ইউনিট, ৩টি ক্যান্সার নির্নয়কসহ ২৫২টি মেশিন এখন অচল। মেশিন কম ও রোগী বেশি থাকায় রোগ নির্ণয় ও রিপোর্ট পেতে রোগীদের অসহনীয় বিলম্বে পড়তে হচ্ছে।
হাসপাতারে আশা নোগী আকবর মিয়া বলেন, এক্স-রে করালে রিপোর্ট মেলে একদিন পর, এটা তো হয় না। নিয়ম হলো টেস্ট করেই রিপোর্ট দেয়ার। মেডিকেলের মেশিন অনেকটা নস্ট। যার জন্য রোগীরা সব টেস্ট করাতে বাইরে চলে যায়।
অপর এক রোগীর স্বজন নাছিমা বেগম বলেন, দু দিন আগে টেস্ট করেও রিপোর্ট মেলেনি, ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুরেও থেরাপি দিতে পারিনি। মেশিন কম রোগীর চাপ বেশি।
অচল এসব মেশিনের মূল্য একশ কোটি টাকারও বেশি । এ হাসপাতালের অর্থ ও ভান্ডার শাখা থেকে বলা হয়েছে এসব মেশিনের ত্রুটি সারানোর জন্য নিয়মিত প্রকৌশলী তাদের নেই। একটি মেশিন সামান্য ত্রুটি হলেও তা সারানোর জন্য দিনের পর দিন উর্ধত্বন কতৃপক্ষের কাছে চিঠি চালাচালি করতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। এসময়ের মধ্যে মেশিনগুলোর সামান্ন ক্ষতি বড় ক্ষতিতে রুপ নেয় । যদি এখানেই সারানো যেতো তাহলে রোগী সেবায় কোন বিঘ্ন হতো না।
এবিষয়ে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) ডাঃ মোঃ রেজুয়ানুর আলম বলেন, অচল মেশিন সারানো যায় যদি আমাদের কোন সরকারি নির্দেশনা থাকে। আমরা আইনের বাইরে যেতে পারি না। এখানে অচল মেশিন সারাতে হলে আমাদের প্রকৌশল শাখাকে জানাতে হয়। এই অনুমতি নিতে নিতেই আমাদের সব দীর্ঘ সুত্রিতার সৃস্টি হয়। তারা যদি এই প্রশাসনিক জটিলতা সহজ করে আমাদেরকে সারাতে দিতো তাহলে তা অনেক ভালো হতো। মেশিনগুলো এভাবে নস্ট হতোনা।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল কতৃপক্ষ সব দায় সত্য স্বিকার করে জানিয়েছে নানা জটিলতায় বড় ও দামি মেশিনগুলো অচল হয়ে পড়ে। এবারে তারা কারন অনুসন্ধ্যান করে ব্যাবস্থা নেয়ার কথা ভাবছেন। তবে তাদের মতে প্রতিট স্তরে অব্যাবস্থার কারনে এমনসব হয়ে যায়। এখন থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে কতৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছেন।
জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা এ কে এম মশিউল মুনির জানান, অনেক ক্ষেত্রেই মেশিন সরবরাহের পর তার স্থাপনে জটিলতা হয়। দেখা যায় চাহিদাত চেয়ে সরবরাহে ঘাটতে ছিলো, তখন সে মেশিন অচল পড়ে থাকে। অনেক সময় মেশিন আসে কিন্তু সরবরাহকারি কেউই আসে না। কিছু মেশিন আছে যা আর সারানো যাবে না, অন্যগুলো সারানোর চেস্টা করা হবে। আমরা একটা টিমের মাধ্যমে প্রতিটি বিভাগের মেশিনগুলোর হাল নাগাদ তথ্য নিয়ে কার্যকর ব্যাবস্থা নেবো। সে ক্ষেত্রে কেন মেশিনগুলো অচল হয়েছে তারও কারন অনুসন্ধান করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সচেতনদের মতে সরকার দক্ষিনাঞ্চলের একমাত্র এই স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে বছরে অন্তত ১০ লাখ গরিব মানুষ বহির্বিভাগে এবং ৫ লক্ষাধিক মানুষ অন্ত বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। রোগীদের জন্য যেসব সেবা নিশ্চিত করেছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমন বেহাল দশার সমাপ্তি চেয়েছেন তারা।