শেবাচিমে রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ধর্মঘট

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পার্কিং স্থান পাওয়ার দাবিতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির ডাকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

এতে করে বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ৬ টা থেকে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতাধীন সকল গাড়ি রোগীদের সেবা বন্ধ রয়েছে।

ফলে বরিশাল থেকে ঢাকাসহ দূর দূরান্তে যাওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা বিপাকে পড়েছেন।সম্প্রতি স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে শেবাচিম কম্পাউন্ড থেকে সকল বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স বের করে দেয়া হয়।

এরপর সরকারী অ্যাম্বুলেন্স সেখানে রেখে রেটচার্ট টানিয়ে দেওয়া হয়। এতে বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায় ধ্বস নামার অবস্থা হয়। তারই প্রতিবাদে এই ধর্মঘট ডাকলো বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ, শেবাচিম ক্যাম্পাসে একটি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা বাইরের কোন অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিতে দেয়না। তাছাড়া তাদের ইচ্ছামাফিক ভাড়া হাকিয়ে রোগীদের জিম্মি করা হতো। সেই সাথে হাত মিলিয়ে সরকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলোকেও সড়িয়ে রাখা হতো। ফলে রোগীরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে।সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেবাচিম পরিচাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীর এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেন।

শেবাচিম কম্পাউন্ড থেকে সকল বেসকারী অ্যাম্বুলেন্স বের করে দেন। এতে রোগীদের মাঝে স্বস্তি দেখা দেয়। তার প্রতিবাদে এবার রোগীদের জিম্মি করে ফের শেবাচিম কম্পাউন্ডে ফেরত যাওয়ার জন্য ধর্মঘট ডেকে ভোগান্তি তৈরী করা হচ্ছে।

চরফ্যাশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রোগী নিয়ে যেতে চাওয়া স্বজন জিয়াউল বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না, তার ওপর বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ধর্মঘট চলছে। এ অবস্থায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোগী নিয়ে কীভাবে যাবো কোন উপায় পাচ্ছি না।অপর এক স্বজন সুমন জানান, তিনিও রোগী নিয়ে ঢাকায় যাবেন কিন্তু সরকারি অ্যাম্বুলেন্স যেতে চাচ্ছে না, এ অবস্থায় বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সও পাচ্ছি না কিন্তু ডাক্তারতো ঢাকায় রোগী রেফার্ড করেছেন।এদিকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক মো. আজিজুর রহমান বলেন, প্রায় দুইশত জন মালিকের সমন্বয়ে ১০৮ টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে বরিশাল অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের আওতায়।

এখানে কোন সিন্ডিকেট নেই, যে যত কম ভাড়ায় সেবা দিতে পারে তার চাহিদা ততো বেশি থাকে। আমাদের মাঝে শৃঙ্খলা ফেরানোর নামে আগের পরিচালক বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং এর জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেয়।

প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ করে সেই জায়গা গাড়ি পার্কিং এর উপযোগী করে তোলে অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা। আর এরপর থেকে দীর্ঘদিন সেখানে অ্যাম্বুলেন্স সুশৃঙ্খলভাবে রাখলেও কিছুদিন পূর্বে সেখানে অ্যাম্বুলেন্স রাখা যাবে না বলে হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক জানিয়ে দেয়।

মালিকরা জানান, দুইদিন আগে তাদের পার্কিং ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, হাসপাতাল পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরের স্মারকলিপি দিয়েছেন। যেখানে তারা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল, তবে ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কোন সুরাহা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ১০৮ টি অ্যাম্বুলেন্সের প্রায় দুইশত জন মালিক-চালক-শ্রমিক মিলে ধর্মঘটে গেছেন। ধারবাহিকতায় বুধবার সকাল ৬ টা থেকে ধর্মঘট চলছে, যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। সেইসাথে প্রয়োজনে এই ধর্মঘট গোটা বরিশাল বিভাগ জুড়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্স মালিক-শ্রমিকরা করবেন।

Comments (0)
Add Comment