শেবাচিমে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা

বরিশাল হেলথ ইনফো ডেস্ক :
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। অব্যাহত হয়রানির মুখে আজ বুধবার (১৩ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ছাড়া হয়রানি বন্ধ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।

 

বিজ্ঞপ্তিতে বরিশালের স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে একাত্মতা জানান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তবে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সাত দফা দাবি উত্থাপন করেন তারা।

 

চিকিৎসকরা বলছেন, ‘বিগত ১৫ দিন ধরে বরিশালে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। আমরা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এই আন্দোলনের যৌক্তিক বিষয়সমূহের সাথে একাত্মতা পোষণ করি। কিন্তু এর প্রেক্ষিতে হাসপাতালে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

 

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, গত ৩ আগস্ট শিশু বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদেরকে মব তৈরির মাধ্যমে হয়রানির ঘটনা এবং হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ছাড়া ৬ আগস্ট হাসপাতালের তৃতীয় সার্জারি ইউনিটে আশানুরূপ উন্নতি এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন না থাকায় এক রোগীকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। কিন্তু রোগী ও স্বজনরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করে এবং হাসপাতাল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

 

একই দিন বরিশাল স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে একজন সাধারণ কাট ইঞ্জুরি নিয়ে হাসপাতালে সার্জারি ইউনিট-৪ এ ভর্তি হয়। কিন্তু সাধারণ রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সিট খালি না থাকায় পোস্ট অপারেটিভ রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত স্টেরাইল বেড দখল করে। চিকিৎসা শেষে তাকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরও জোরপূর্বক হাসপাতালে অবস্থান করে এবং নানা হুমকি দিতে থাকে।

 

এ ছাড়া ১০ আগস্ট হাসপাতালের দ্বিতীয় সার্জারি ইউনিটে একজন লোক ভর্তি না হয়েও অ্যাডমিশন রুমে এসে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসককে বল প্রয়োগ করে এবং হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরেও সে অকারণে সিনিয়র একজন চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। পরদিন ১১ আগস্ট হাসপাতালের শিশু বিভাগের নবজাতকদের জন্য বিশেষায়িত ইউনিটে (স্ক্যানু) নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য ও ওয়ার্ড বয়ের সাথে একজন রোগীর অভিভাবক ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে এবং শারীরিক হেনস্তার ঘটনা ঘটে। একই সাথে কর্তব্যরত নার্সদেরকে হুমকিও প্রদান করা হয়।

 

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে অ্যাপ্রোন পরা অবস্থায় হয়রানি করা হয়। একই দিন সার্জারি ইউনিট-৩ এর একজন ক্যান্সারের রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর লোকজন আইসিইউতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীতে ওই রোগী মৃত্যুবরণ করলে কর্তব্যরত নারী চিকিৎসকের সাথে অসদাচরণ এবং তাকে হেনস্তা করা হয়। এ ছাড়া মেডিসিন ইউনিট-১ এর অধীনে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন একজন রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় কর্তব্যরত নারী চিকিৎসককে হেনস্তা করা হয়।

 

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, এ কয়েকদিনে চিকিৎসাকর্মীদের সাথে আরও অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

 

তারা বলছেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং নিয়মিত কাজের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছি।

 

এই পরিস্থিতিতে সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছেন এসব ইন্টার্ন চিকিৎসক। এর মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত তিনটি দাবি হলো—কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; অ্যাডমিশন ও পোস্ট অ্যাডমিশন ওয়ার্ডে আনাসর সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; এবং হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশ দর্শনার্থী প্রবেশ কার্ডের মাধ্যমে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, একজন রোগীর সাথে একজন দর্শনার্থী থাকতে পারবে।

 

হাসপাতালের উন্নয়নে উত্থাপতি দাবিগুলো হচ্ছে—হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ক্যাজুয়ালটি বিভাগকে কার্যকর ও উন্নত করতে হবে; সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, যেসব পরীক্ষা চালু নেই সেগুলো দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করতে হবে; দালালের দৌরাত্ম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; এবং হাসপাতালের বেড সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি নেওয়া বন্ধ করতে হবে, প্রয়োজনে বেড সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তারা বলেন, ‘যদি এর পরবর্তীতে আর কোনো ধরনের হয়রানির ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হবো।

Comments (0)
Add Comment