বরিশাল হেলথ ইনফো ডেস্ক :
বিজ্ঞপ্তি ছাড়া অ্যাডহক ভিত্তিতে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৬৫ জন চিকিৎসকের নিয়োগ বাতিল করেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বোর্ড। বিতর্কিত এ নিয়োগ বাতিলের পাশাপাশি নতুন করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৪২ জন চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বোর্ড। শনিবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় ১৫ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
আজ রোববার (২০ জুলাই) বিকেলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম নিয়োগ বাতিল ও নতুন নিয়োগের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তাই পরিচালনা বোর্ডের সভায় আলোচনা শেষে সর্বসম্মতভাবে এ নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ ও ১৩ এপ্রিল হাসপাতালের পরিচালনা বোর্ডের ২২ ও ২৩তম সভার পর গত ৪ জুলাই বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৬৫ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে, নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিল অস্বচ্ছ ও পক্ষপাতদুষ্ট। অভিযোগ রযেছে, হাসপাতালের পরিচালক ডা. মাহবুবুল হক এবং পরিচালনা বোর্ডের এবং পরিচালনা বোর্ড ও নিয়োগ কমিটির প্রধান ডা. একেএম আজিজুল হক পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে গোপন বিজ্ঞপ্তির আশ্রয় নেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে হাসপাতালের ওয়েবসাইট বা জাতীয় দৈনিকে কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। বরং অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়।
তাদের অভিযোগ, হাসপাতালে কর্মরত অনারারি চিকিৎসকদের একটি অংশকে রাতারাতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই কোনো প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় অংশ নেননি।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা গ্রহণ, খাতা মূল্যায়ন, মেধাক্রম অনুযায়ী ফল প্রকাশ ও প্রজ্ঞাপন ছাড়া এ নিয়োগ নিয়োগ বাতিল করে নতুন নিয়োগের আহ্বান জানান বঞ্চিত ও সাধারণ চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে তারা দাবি করেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আবার নিয়োগ দেওয়া হোক। মেধার ভিত্তিতে জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিয়োগ প্রক্রিয়া তদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিস্তারিত জানতে চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও পাঠায় মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে গত ১৪ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সাথে কি কারণে এমন নিয়োগ দেয়া হলো, সেই ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনিভাবে যা যা দরকার তা করা হবে। আমরা কোনো বেআইনি কাজ করবো না এবং বেআইনি কাজকে প্রশ্রয় দেবো না।’
এর এক সপ্তাহের মাথায় এ নিয়োগ বাতিল করলো বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালনা বোর্ড।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. একেএম আজিজুল হকের নেতৃত্বে পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন দেশের ১৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
তারা হলেন—বারডেমের অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিয়ার রহমান, বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. মহসীন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শামীমা ফেরদৌস, অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মো. নজরুল ইসলাম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ হাসান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হুসাইন মো. মইনুল আহসান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের প্রাক্তন সদস্য ডা. এমএ কামাল, শিশু হাসপাতালের নিওনেটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মনির হোসেন ও জেনারেল পেডিয়াট্রিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রওশন জাহান আক্তার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যাপক (অব.) ডা. শাকিল আহমেদ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) স্থায়ী স্বীকৃতি প্রদান কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন।