চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ শিল্পের সম্পর্ক নৈতিকতার মানদণ্ডে উন্নীত হওয়া প্রয়োজন

বরিশাল হেলথ ইনফো ডেস্ক :
চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ শিল্পের সম্পর্ক নৈতিকতার মানদণ্ডে উন্নীত হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। আজ শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

‘সিকেডি রোগীদের জীবনমানের উন্নয়ন: প্রুরিটাস ও এমবিডি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে ‘ওষুধ শিল্প-সম্পর্কিত সেমিনারে অংশগ্রহণ: নৈতিকতা, একাডেমিক সততা ও পেশাগত দায়িত্বের ভারসাম্য’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমইউ ভিসি।

 

এ সময় অধ্যাপক শাহিনুল আলম বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সৌজন্যে আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার, কনফারেন্সসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনার সময় এসেছে। এ ধরণের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা যাবে—নাকি যাবে না, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি বিশদ আলোচনারও দাবি রাখে। তবে এক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার পাবলিক পারসেপশন বা জনগণ বা রোগী কীভাবে এটিকে দেখছেন, সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

 

ভিসি তার বক্তব্যে বলেন, কোনোভাবেই চিকিৎসকদের নৈতিকতাকে বা চিকিৎসা পেশার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করে এমন কিছু থাকলে সেক্ষেত্রে সে সকল প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়াই ভালো। ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে এ ধরণের আয়োজনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নৈতিকতার দৃষ্টি ভঙ্গিতে বিধি-নিষেধ রয়েছে। কেবলমাত্র চিকিৎসকদের সাথে ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির সম্পর্ক নৈতিকতার মানদণ্ডে উন্নীত হলে এই ধরণের আয়োজনে অংশ নেওয়া যায়, যদি সেখানে চিকিৎসকদের ব্যক্তি স্বার্থের পরিবর্তে রোগীদের স্বার্থ অগ্রাধিকার পায়, চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণা প্রাধান্য পায় এবং রোগীর কল্যাণ হয়। কম দামী, কিন্তু অধিক কার্যকরী ওষুধ প্রাপ্তি, উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে এমন বিষয়সহ নানাবিধ বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান রোগীদের কল্যাণে প্রয়োগ হয় এমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে চিকিৎসকদের বাধা নেই।

 

‘তাছাড়া এ ধরণের আয়োজনে যারা অংশ নিবেন—তাদেরকে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আয়োজনে কি ধরণের স্বার্থ রয়েছে, কাদের স্বার্থ পূরণ করা হচ্ছে, আর্থিক সংশ্লিষ্টতা কী রকম, রোগীদের স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষণ করা হচ্ছে—সে রকম নানাবিধ বিষয় বর্তমান সময়ে বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। একই সাথে চিকিৎসকদের সাথে ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির সম্পর্ক নৈতিকতার মানদণ্ড নিয়ে সর্বত্র আলোচনার এখনই সর্বোত্তম সময়। আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেকই নিঃস্ব হচ্ছেন, এ দেশে বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ গরীব হচ্ছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে আর চুপ থাকা যাবে না’—যোগ করেন অধ্যাপক শাহিনুল আলম।

 

পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সেমিনারে জুলাই আন্দোলনে শহীদ এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিশেষ ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম মাহবুব সিকদার।

 

বৈজ্ঞানিক সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলামসহ সংগঠনটির সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রদীপ কুমার দত্ত, অধ্যাপক ডা. আব্দুল মুকিত, অধ্যাপক ডা. ধ্রুব দাস, অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. সৈয়দ মাহতাব উল ইসলাম, ডা. এনামুল কবির, ডা. আনিসুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Comments (0)
Add Comment