হেলথ ইনফো ডেস্ক :
দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসজনিত রোগ সিওপিডি এখন বাংলাদেশের একটি গভীর স্বাস্থ্য সংকট জানিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা, নীতিনির্ধারণ ও জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় সিওপিডিকে অগ্রাধিকারে আনতে হবে।’
আজ মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিশ্ব সিওপিডি দিবস উপলক্ষে বিএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘সিওপিডি: দ্য হিডেন পাবলিক হেলথ ক্রাইসিস’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ সব কথা বলেন।
বিএমইউর বক্ষব্যাধি (রেসপিরেটরি) বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। সভাপতিত্ব করেন রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডা. মানাল মিজানুর রহমান। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন ডা. কবিরুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইউনিহেলথ ফার্মার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. শামীম আলম খান। অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল।
অনুষ্ঠানে বিএমইউর প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরতেকা রহমান, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল কাদের, অধ্যাপক ডা. কাজী মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, এনআইডিসিএইচ-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, ডিএমসির রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আদনান ইউসুফ চৌধুরী, সিএইচএবি–এর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. গোলাম সারোয়ার লিয়াকত হোসেন ভূঁইয়া, রেসপিরেটরি বিভাগের ডা. রাজশিস চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, সিওপিডি এখন বাংলাদেশের একটি গভীর জনস্বাস্থ্য সংকট। ধূমপান, বায়ুদূষণ ও ইনডোর স্মোক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা, নীতিনির্ধারণ ও জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় সিওপিডিকে অগ্রাধিকারে আনতে হবে। দ্রুত শনাক্তকরণ, কমিউনিটি–স্তরের স্ক্রিনিং এবং আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করাই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, সিওপিডি প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সিওপিডি প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় গাইডলাইন ও নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সিওপিডি নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে।
অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম আরও বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে জনগণের প্রয়োজন ও রোগীদের কল্যাণে বাস্তব উপকার বয়ে আনে—এমন গবেষণাকে। অনেক সময় বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে গবেষণা করলেই তা যে বড় গবেষণা হবে বা জনগণের উপকারে আসবে—এ ধারণা সবসময় সঠিক নয়। অল্প ব্যয়ে পরিচালিত বহু গবেষণাই মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, এমন উদাহরণও রয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আজকের এই আয়োজন ভবিষ্যতে গবেষণা, রেসিডেন্সি ট্রেনিং, পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং ডিজিজ রেজিস্ট্রি তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সিওপিডি প্রতিরোধে ধূমপান পরিহার, বায়ুদূষণ হ্রাস করাসহ সকল ঝুঁকি মোকাবিলায় গুরুত্ব দিয়ে সমন্বিত ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। গ্রামে রান্নার চুলা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম মায়েদেরকে অবহিত করতে হবে। সিওপিডির রোগীরা যাতে গাইডলাইনভিত্তিক যথাযথ চিকিৎসা পায়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় গণমানুষকে সচেতন করা জরুরি। সিওপিডি প্রতিরোধে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ ও ধূমপান পরিহার অপরিহার্য। উন্নয়ন ও রোগ প্রতিরোধে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।
অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ বলেন, মনে রাখতে হবে সিওপিডি প্রতিরোধযোগ্য। সিওপিডি প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় শক্তি। একসাথে কাজ করলে আমরা এই রোগের বোঝা প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত কমাতে পারব। আজকের সেমিনার ও আলোচনা স্পষ্ট করেছে, সিওপিডি মোকাবিলার জন্য সমন্বিত গবেষণা, রোগী শিক্ষা, ধূমপান নিয়ন্ত্রণ এবং আধুনিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি। বিএমইউ এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। আজকের আলোচনার সুপারিশসমূহ আগামী বছরের অ্যাকশন প্ল্যানে যুক্ত করা হবে।
এর আগে সিওপিডি দিবস উপলক্ষে বিএমইউর কেবিন ব্লক থেকে একটি বণার্ঢ্য র্যালি বের হয় এবং বেলুন ও পায়রা উড়ানো হয়।