নিজস্ব প্রতিবেদক :
চৈত্রের কাঠফাটা রোদ আর দাবদাহের সাথে পাল্লা দিয়ে বরিশালে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী। তবে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় রোগীদের সেবা নিতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত স্যালাইন মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ জন নারী,পুরুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন মেঝেতে। রোগী সামলাতে হিমশিম অবস্থা কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের৷ এর পাশাপাশি হাসতালের বহিঃবিভাগেও চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের নার্স অর্চনা রানী বলেন৷
গরম বাড়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৯-৪০ জন ভর্তি হচ্ছেন। আমরা সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। সামনে চাপ আরো বাড়তে পারে। বেড সংকট হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। অপরিস্কার অপরিচ্ছন্নতার কারনেও এমনটা হতে পারে বলে ধারনা চিকিৎসকদের।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক
ডা. আশিকুর রহমান জানান, রোগীরা যদি অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে তবে এ রোগ হতে পারে। সকলে এবিষয় সচেতন থাকলে ডায়রিয়া রোধ করা সম্ভব। যেহেতু এটা পানি বাহিত রোগ সেহেতু সবাইকে পরিস্কার পানি পান করা জরুরী। বর্তমানে হাসপাতালে যারা আসছে আমরা তাদেরকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছি। এখানে ডায়রিয়া আক্রান্তদের সঠিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালে আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই খবার পরে প্রথমে পেটে ব্যাথা অনুভব করে। পাশাপাশি বমি ও পরে ডায়রিয়া শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অনেকেই বলছে হঠাৎ করে গরম বেরে যাওয়ায় মাথা ঘুরানো, পেটে ব্যাথা অনুভব করে প্রথমে ফামের্সি থেকে ঔষধ কিনে খেয়েছেন। এতে কাজ না হওয়ায় তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী আকলিমা বেগম বলেন, হঠাৎ করে পেট খারাব হলে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের আসার আগে ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনে খেয়েছি কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
নগরীর কাউনিয়া এলাকারর সুরুজ মিয়া বলেন, হঠাৎ করে মেয়ে মাথা ঘুরে পরে যায়। বমি হয়, তার পর থেকে ডায়রিয়া। তাই হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
অপর এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার কয়েকদিন ধরে পেটে ব্যাথা ছিল।
হাসপাতালে স্যালাই ও ঔষধ সেবনের পর কিছুটা সুস্থ।
বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর গেল তিন মাসে ১ হাজার ৩০৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্য জানুয়ারি মাসে ৩৮০, ফেব্রুয়ারীতে ৩৯০ এবং মার্চ মাসে ৫৩৬ জন। আর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৮০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলছে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সরকারি বরাদ্দের বেড রয়েছে মাত্র ৪ টি। এর সাথে আরো ৮ টি বেড সংযুক্ত করা হয়েছে। যায়গার সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে ডায়রিয়া রোগীদের পর্যাপ্ত ঔষধ ও স্যানাই মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।
এবিষয়ে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, আমাদের এখানে গড়ে ৩০-৪০ জন রোগী প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের বর্হিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেক রোগী। বরিশাল ও এর আশপাশের এলাকা থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। আমাদের পর্যাপ্ত ঔষধ ও স্যালাই মজুদ আছে। তবে বেড না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
সামনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে হাসপাতালে রোগীর চাপ আরো বাড়তে পারে বলে ধারনা চিকিৎসকদের। বরিশালের আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে বরিশালে সবর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামনে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।