Take a fresh look at your lifestyle.

৬৯ শতাংশ নারী পোশাককর্মীর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয় : গবেষণা

৯০

বরিশাল হেলথ ইনফো ডেস্ক :

দেশের পোশাকশিল্পে কর্মরত নারীদের ৬৯ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে তাদের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে। আর ৬৫ শতাংশই গর্ভবতী হয়েছেন অপ্রাপ্তবয়সেই।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর আইসিডিডিআর,বির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের শহুরে বস্তিতে বসবাসকারী নারী পোশাক শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার’ শীর্ষক গবেষণার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরে বসবাসরত নারী পোশাককর্মীদের ওপর এ গবেষণা করা হয়েছে। এটি শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের আগস্টে এবং শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। ঢাকা ও গাজীপুরের শহুরে বস্তিগুলোতে এ গবেষণা চালানো হয়। বস্তিগুলোর বাসিন্দাদের ১৫-২৭ বছর বয়সী ৭৭৮ জন বিবাহিত নারী পোশাককর্মী ছিলেন গবেষণার অংশগ্রহণকারী।

গবেষণায় উঠে এসেছে বাল্যবিবাহ, কৈশোরে গর্ভধারণ, পরিবার পরিকল্পনায় সচেতনতা, সহিংসতা ও সক্ষমতা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।

গবেষণা অনুসারে, প্রায় প্রতি তিনজনের একজন জীবনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের অভিজ্ঞতা নিয়ে চলেছেন। প্রতি চারজনের একজন গর্ভপাত বা মাসিক নিয়মবিধিতে সমস্যায় পড়েছেন। গবেষণার শুরুতে মাত্র ৪৯ শতাংশ নারী জানতেন দীর্ঘমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির কথা । গবেষণার শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে।

গবেষণার শুরুতে জরুরি গর্ভনিরোধক (ইমার্জেন্সি পিল বা ট্যাবলেট) সম্পর্কে জানা ছিল মাত্র ১৫ শতাংশের, পরে তা উঠে আসে ৩৯ শতাংশে। দাম্পত্যে ও পরিবার পরিকল্পনায় সমান সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব শুরুতে ছিল ৫৪ শতাংশের, শেষ পর্যায়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে ও ঘরে দুই জায়গাতেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গবেষণার প্রথমে মানসিক সহিংসতার হার ছিল ৪৮ শতাংশ; পরবর্তী পর্যায়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫ শতাংশ। সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে অল্প সংখ্যকই অফিসিয়াল বা নির্ধারিত সহায়তা চেয়েছেন। শুরুতে যা ছিল ৩৫ শতাংশ, শেষ পর্যায়ে কমে তা দাঁড়ায় ২১ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গর্ভধারণের আগেই গর্ভনিরোধক ব্যবহার শুরু করেছিলেন, তাদের কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ৪৭ শতাংশ কম। এছাড়া যারা প্রথম গর্ভধারণের আগে গার্মেন্টস খাতে কাজ শুরু করেছিলেন, তাদের ঝুঁকি আরও কম।

অন্যদিকে, স্বামী কর্তৃক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থাকলে কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ বেড়ে যায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।

এই গবেষণার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআর,বির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. রুচিরা তাবাসসুম নভেদ বলেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনামূলক এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অবস্থা অন্য নারীদের চেয়েও খারাপ। পরিস্থিতি উন্নয়নের নিয়ামকগুলো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা দরকার। এজন্য সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ও অংশীদারদের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

বিকেএমইএর যুগ্ম-সচিব ফারজানা শারমিন বলেন, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে সেবা বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু তা ‘অপর্যাপ্ত’, কারণ নারীদের কথা শোনার সংস্কৃতিই ম্লান।

মেরি স্টোপস বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও গবেষক ইয়াসমিন এইচ আহমেদ বলেন, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীরা এখনো দোকানে গিয়ে স্বল্পমেয়াদী জন্মবিরতিকরণ সামগ্রী ক্রয় করতে পারে না। তাই গার্মেন্টসগুলোতে কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি সাধারণ জন্মবিরতিকরণ সামগ্রীগুলো নিশ্চিত করতে হবে।

সেমিনারে পপুলেশন কাউন্সিল বাংলাদেশের সাবেক পরিচালক ড. উবাইদুর রব বলেন, নারীদের কর্মক্ষেত্র এখন কেবল গার্মেন্টসই সীমাবদ্ধ নেই। তবে যেখানেই কাজ করুক না কেন অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ কমাতে হবে। এজন্য কর্মীদের জ্ঞান বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

Leave A Reply

Your email address will not be published.