মেডিভয়েস রিপোর্ট:
স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকল চিকিৎসককে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে নিয়োগপ্রত্যাশী সাধারণ চিকিৎসক ফোরাম। আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. মো. আল মুনতাসির বলেন, ‘বর্তমানে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজার ৯৮০টি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। এতে সাধারণ জনগণ পর্যাপ্ত সরকারি চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। সমাজের বিত্তশালীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারেন। তবে তৃণমূলের অধিকাংশ মানুষের একমাত্র অবলম্বন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহ। এসব প্রতিষ্ঠানে পদ ফাঁকা রেখে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ।’
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ তার মধ্যে অন্যতম।
ডা. মুনতাসির বলেন, ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএসের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসক নিয়োগ চলমান রয়েছে, যা বর্তমান সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সফলতা। ইতোমধ্যে ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএসের মাধ্যমে তিন হাজার ১২০ জনকে সহকারী সার্জন পদে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ৪৪তম, ৪৫তম ও ৪৬তম এর নিয়োগ প্রক্রিয়া অসমাপ্ত থাকায় ওই বিসিএসগুলোর নিয়োগের বিভিন্ন পর্যায়ে অপেক্ষমাণ চিকিৎসকরাও ৪৮ এ সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিশেষ এই বিসিএসে প্রায় এক হাজার ৫০০ জন প্রার্থী ৪৪তম ও ৪৬তম বিসিএসের নিয়োগের বিভিন্ন পর্যায়ে অপেক্ষমাণ রয়েছেন। ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ৪৪তম থেকে ৪৮তম বিসিএসে সর্বমোট সাত হাজার ৩৪৬টি পদ থাকলেও পূর্ববর্তী বিসিএসগুলোর নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে ৪৮তম থেকে নিয়োগ প্রদান করা হলে আনুমানিক দুই হাজার ২০০ জন পূর্বের বিসিএসে অপেক্ষমাণ (রিপিট) প্রার্থী থাকবে। এসব প্রার্থী সিনিয়রিটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কারণে ৪৪তম, ৪৫তম, ৪৬তম ও ৪৭তম বিসিএসে যোগদান করবেন। অর্থাৎ ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের সহকারী সার্জন পদগুলো পুনরায় ফাঁকা হয়ে যাবে এবং চিকিৎসক সংকট নিরসন হবে না; যা রাষ্ট্রের সময়, অর্থ ও শ্রমের অপূরণীয় ক্ষতি। একই সাথে বিশেষ বিসিএস নেওয়ার মাধ্যমে তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদারের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হবে।
‘এ ছাড়াও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দেওয়া তথ্যমতে, আরও ৩ হাজার শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাক্ষরিত হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএসের বিজ্ঞপ্তির বিশেষ নির্দেশনায় বলা আছে, নতুন পদ সৃষ্টি, পদ বিলুপ্তি, পদোন্নতি, অবসর গ্রহণ, মৃত্যু ও পদত্যাগ অথবা অপসারণ ইত্যাদি কারণে বিজ্ঞাপিত শূন্যপদের সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে’—বলেন নিয়োগপ্রত্যাশী চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যেহেতু ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং চূড়ান্ত গেজেট হবার আগেই তিন হাজার শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে, সেহেতু অবিলম্বে ৪৮তম বিশেষ বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধাক্রমের ভিত্তিতে শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ করার আবেদন জানানো যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলেন, এখনও ৪৪তম বিসিএসের নিয়োগের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশ সম্ভব হয়নি। তাই ৫০তম বিসিএসে চূড়ান্ত নিয়োগও নিকট ভবিষ্যতে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
‘এমতাবস্থায় সহকারী সার্জন পদে পর্যাপ্ত শূন্যপদ থাকায় রিপিট প্রার্থীর সংখ্যা ও সাধারণ বিসিএসের দীর্ঘ সূত্রিতার বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সকলকে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর আবেদন জানানো যাচ্ছে’—বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।