Take a fresh look at your lifestyle.

‘৪৮তম বিসিএসের উত্তীর্ণদের পদায়ন অটোমেশনে : পুলিশ ভ্যারিফিকেশন সম্পন্ন

১১৭

হেলথ ইনফো ডেস্ক :
৪৮তম বিসিএসের চিকিৎসকদের পুলিশ ভ্যারিফিকেশন সম্পন্ন হয়ে উত্তীর্ণদের তথ্য এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায়ে আসলে তাদের নিয়োগ সম্পন্ন হবে। আর পুরো পদায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে অটোমেশনের মাধ্যমে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের (নিন্স) নতুন ৫০০ শয্যার সম্প্রসারিত ভবনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, ‘৪৫, ৪৬ ও ৪৭—এই তিনটি সিবিএসের নিয়োগ এখনো হয়নি। ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএসে ফলাফল মাত্র প্রকাশিত হয়েছে। ৪৮তম বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া শুধুমাত্র পুলিশ ভ্যারিফিকেশন বাকি ছিল। পুলিশ ভ্যারিফিকেশন হয়ে উত্তীর্ণদের তথ্য সেখান থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চলে গেছে। জনপ্রশাসন থেকে আমাদের কাছে এলে নিয়োগ সম্পন্ন হবে। একটি জিনিস বলে ফেলা ভালো, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পুরো পদায়ন প্রক্রিয়া অটোমেশন করা হচ্ছে। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে অটোমেশন প্রক্রিয়াতে সম্ভবত এটাই প্রথমবারের মতো হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে নার্সদের নিয়োগও এই প্রক্রিয়ায় করেছি। তিন হাজার ৫০০ নার্স নিয়োগ ও তার পর ১১শ’র উপরে নার্স এই প্রক্রিয়ায় হয়েছিল। ৪৮তম বিসিএসে চিকিৎসকদের পদায়নও অটোমেশনের মাধ্যমে হবে।’

‘তবে ৪৮তম বিসিএসের সঙ্গে এই হাসপাতালের (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল-নিন্স) জনবল নিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ৪৮ এর চিকিৎসকরা পদায়িত হবেন উপজেলা ও তার নিচের স্তরে। আর নিন্সে যারা আসবেন তারা মূলত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অথবা অভিজ্ঞ চিকিৎসক, অর্থাৎ তুলনামূলক জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা। এ ছাড়াও নার্সদের একটা অংশ পদায়িত হয়েছেন, আগামীতে বাকি অংশ পদায়িত হবেন। সুতরাং বিভিন্ন ক্যাডাগরির চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী এখানে লাগবে। এটা স্বাস্থ্য ও পরিবাল কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এবং কয়েকটি সন্তোষজনক প্রতিষ্ঠানের একটি। অতএব এখানে পদায়নে কোনো রকম ঘাটতি হবে না।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া চলমান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় সাত হাজার সুপারনিউমারারিসহ আনুমানিক দশ হাজার চিকিৎসকের পদোন্নতি চলছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদোন্নতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।’

অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ‘দশ হাজার পদায়ন প্রক্রিয়া আসলে জটিল, এটা সম্পন্ন হলে সারাদেশসহ এই প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, যেমন—নিউরোসার্জন, নিউরোফিজিশিয়ানসহ অন্যান্য যেসব বিশেষজ্ঞ দরকার সেগুলো তারা পেয়ে যাবেন। আরও গ্রাজুয়েট চিকিৎসক পাবেন যখন ৪৮তম বিসিএসের চিকিৎসকদের নিচে পাঠানো হবে। সেটা আসবে জেলা ও উপজেলা থেকে, যারা অনেক দিন সেখানে কাজ করেছেন।’

‘এখন থেকে এটা যৌক্তিক উপায়ে নিচ থেকে আসবেন। যারা দীর্ঘদিন (উপজেলা ও জেলায়) কাজ করেছেন, তারা পর্যায়ক্রমে উপরের দিকে আসবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেট্রিকবেইজড ট্রান্সফার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তারা পদায়ন হবেন’—জানান তিনি।

পরে এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, জনবল ও অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে নবনির্মিত প্রায় ৮০টি হাসপাতাল এখনো চালু করা যায়নি। উচ্চমানের ভবনগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ সাধারণ ভবনের তুলনায় অনেক বেশি জটিল ও ব্যয়বহুল। বিশেষ করে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বড় ধরনের ঘাটতি থাকায় সংবেদনশীল মডুলার যন্ত্রপাতি ঠিকমতো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা যাচ্ছে না।

বায়োমেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক ব্যাকঅ্যান্ড সাপোর্ট না দিলে এসব যন্ত্রপাতি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।

নিউরোসায়েন্সেসের নতুন ভবনকে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের ‘বিরাট ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন ডা. সায়েদুর রহমান। বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য শুধু সেবা দেওয়া নয়, জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর প্রধান দায়িত্ব হলো নিউরোসাইন্সেসের জাতীয় মান নির্ধারণ, প্রটোকল তৈরি এবং গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যার সমাধান খোঁজা।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ভুল রেফারেল ও রোগী গ্রহণ না করার মতো উদাসীনতা মানুষের জীবনের ওপর গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। ঢাকার বড় হাসপাতালগুলোর চাপ ও বিশৃঙ্খলার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমন অবস্থা যে করিডোর বা বারান্দায় দাঁড়ানোরও জায়গা নেই।’

তিনি আরও বলেন, কোনো রোগীকে ফেরত দিলে তাকে কোথায় যেতে হবে তা বলা দায়িত্ব। একই সঙ্গে যেদিকে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে আগে জানিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে রোগী সঠিকভাবে গ্রহণ হয়। দাঁতের রোগীকে ভুল বিভাগে পাঠানো বা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে অনুপযুক্ত জায়গায় রেফার করা—এ ধরনের ভুল রোগীর জীবনের ঝুঁকি বাড়ায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা ও রোগীবান্ধব পরিবেশের প্রশংসা করে সচিব বলেন, একই আউটসোর্সিং জনবল থাকা সত্ত্বেও দেশে অনেক হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে না, কিন্তু নিউরোসায়েন্স সেখানে ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে সীমিত সক্ষমতায় যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশে একটি মডেল।

স্বাস্থ্য সচিব বলেন, চিকিৎসকদের দায়িত্ব চিকিৎসা দেওয়া, ব্যবস্থাপনার কাজ নন-মেডিকেল স্টাফদের। এজন্য প্রতিটি বড় হাসপাতালে অন্তত একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও একজন ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল বিশেষজ্ঞ যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য আলাদা সেবা এলাকা থাকলে বয়স্কদের জরুরি চিকিৎসা পাওয়া সহজ হবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, ‘যেকোনো সময় যে কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী গিয়াস উদ্দীন আহমেদ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.