হেলথ ইনফো ডেস্ক :
নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ছয় দফা দাবিতে মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। এর ফলে সারাদেশেরে এক লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। টিকা নিতে আসা মা ও শিশু সময়মতো টিকা না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) অধিদপ্তরের সামনে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। টানা চতুর্থ দিনের মতো চলছে এই আন্দোলন।
স্বাস্থ্য সহকারীরা জানিয়েছেন, জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করে তারা কর্মবিরতিতে যেতে চাননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণেই তারা বাধ্য হয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও প্রস্তাব অনুযায়ী দাবিগুলো জিও (প্রজ্ঞাপন) আকারে প্রকাশ করেন, তবে তারা অবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে যাবেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো—
১. নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা সংযুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান,
২. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদান,
৩. পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিত করা,
৪. সকল স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিদর্শকদের প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা,
৫. বেতন নির্ধারণে টাইম স্কেল ও উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা ও
৬. ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) কোর্সকে সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, তারা মূলত প্রান্তিক পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচিসহ জনস্বাস্থ্যের সেবায় সম্মুখসারির কর্মী হিসেবে কাজ করেন। জন্মের পর শিশুর সুস্বাস্থ্য ও সুরক্ষার জন্য ১০টি মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করাও তাদের দায়িত্ব।
তাদের কাজের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে টিকাদানের রোড মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশ থেকে গুটি বসন্ত দূর হয়েছে, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে এবং পোলিও মুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। এছাড়া হাম, রুবেলা, করোনা, জরায়ূমুখের ক্যান্সার (এইটপিভি) এবং সর্বশেষ প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টাইফয়েড (টিসিভি) টিকা সাফল্যের সঙ্গে তারা প্রদান করেছেন।
তারা বলেন, ‘আমাদের কাজের ফলে দেশে গড় আয়ূ বৃদ্ধি হয়েছে এবং আন্তজার্তিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত সুপিরচিতি লাভ করেছে। আমাদের কাজের বিনিময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ গর্বিত আজ আমরাই অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার।’
সংগঠনের নেতারা বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ব না। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, তাই এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বারবার আমাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক বলে আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু সেই আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির মধ্যেই ২৭ বছর পেরিয়ে গেছে। আর তাদের ওপর ভরসা করা নয়। প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন, আর সেই ঘুম ভাঙাতেই আমরা অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচিতে নেমেছি। দেশের মা ও শিশুরা টিকা না পেয়ে ঝুঁকিতে পড়লে তার দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই নিতে হবে।’
দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান জানিয়ে তারা আরও বলেন, ‘১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করে সরকারি আদেশ জারি না করা পর্যন্ত আমরা কোনোভাবেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না। প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
আজ সকাল থেকে ঢাকা মহাখালি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলা থেকে আগত হাজার হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও মনিপাতা নিয়ে হাজির হন।
এর আগে গত অক্টোবরেও একই দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন। তখন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। ‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে তারা গত শনিবার থেকে পুনরায় এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সর্বশেষ সোমবার (১ ডিসেম্বর) স্বহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।