হেলথ ইনফো ডেস্ক :
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ মো. ওসমান হাদীকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স।
আজ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হয় সাদিকে। সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে।
এর আগে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে হাদিকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) হাদিকে নেওয়ার জন্য বেলা ১১টা ২২ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
এর আগে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এই সিদ্ধান্ত হয়।
গত তিন দিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে সরকার।
রোববার এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল এবং অপরিবর্তিত রয়েছে।
সোমবার দুপুরে ওসমান হাদীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ওসমান হাদীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
ওসমান হাদীর দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
রোববার দুপুরে ওসমান হাদীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড মিটিং শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের ডা. আব্দুল আহাদ বলেন, ‘শরীফ ওসমান হাদীর মস্তিষ্কের সিকিস্ক্যানের রেজাল্ট খুবই খারাপ এসেছে। রিপিট সিটি স্কেনে প্রচুর অক্সিজেন স্বল্পতা লক্ষ্য করা গেছে। মস্তিষ্কের একাধিক জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধার মতো পাওয়া গেছে। ব্রেইন স্টেমের আঘাতের জায়গা এখনো খারাপ অবস্থায় আছে। এটাই এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।’
চলমান চিকিৎসায় ওসমান হাদীর স্বাস্থ্যের কোনো অগ্রগতি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগের মতোই খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে। সার্বিক অবস্থা অপরিবর্তিত বলা যায়।’
‘এ ছাড়া ফুসফুস আগের মতোই আছে। এই অঙ্গটি সাপোর্টে চলছে। কিডনির কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে’—যোগ করেন ডা. আহাদ।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে জুমার নামাজ শেষে রিকশায় গন্তব্যে ফিরছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ মো. ওসমান হাদী। রাজধানী বিজয়নগরের কালভার্ট এলাকায় পেছন থেকে আসা মোটর সাইকেলের আরোহী থেকে খুব কাছ থেকে ওসমান হাদীর মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি তার মাথার ডান পাশ দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এর পর মোটর সাইকেলের গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ওসমান হাদীর মাথায় অস্ত্রোপচারসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে একই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।