Take a fresh look at your lifestyle.

মেরুদণ্ডের চিকিৎসা বিশ্বে ব্যয় ৮ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার

১০৭

হেলথ ইনফো ডেস্ক :
কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত চাকরিজীবীদের বড় একটি অংশ মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত। এ কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আট কোটি ৩০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বছরে এর চিকিৎসা ব্যয় দাঁড়ায় আট হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। এ সমস্যায় আক্রান্তদের কারণে সৃষ্ট উৎপাদনহীনতায় যে ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব স্পাইন দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক অফিসের কনফারেন্স হলে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে কি-নোট স্পিকার হিসেবে আলোচনা করেন ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের নিউরো স্পাইন উইংয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি পাঁচজনে চারজন মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে ডা. সালাহ উদ্দিন বলেন, ২০২০ সালে শুধু কোমর ব্যথায় ৬১৯ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৮৪৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।

‘গত বছর যক্তরাষ্ট্রে কোমর ও ঘাড় ব্যথার চিকিৎসায় ১৩৪.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, যা ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসার চেয়েও বেশি’—যোগ করেন তিনি।

এ সময় মেরুদণ্ডের সমস্যার প্রকোপ দিন দিন বাড়ার কারণ উল্লেখ করে ডা. সালাহ উদ্দিন বলেন, এ ক্ষেত্রে স্থুলতা ও ধূমপানের পাশাপাশি পেশা একটি বড় কারণ। এ ছাড়া কম শারীরিক শ্রমের জীবনধারা, দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করা অন্যতম কারণ। একইভাবে কঠোর পরিশ্রমের যেসব কাজ রয়েছে, সেসব কাজে যুক্তরা স্পাইনাল সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন।

তিনি বলেন, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে মেরুদণ্ডের রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বোঝা হলো মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগ (স্পাইনাল কাড)। এ রোগে সারাপৃথিবীতে প্রতি বছর ১৫.৪ মিলিয়ন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। স্বল্পআয়ের দেশে মেরুদণ্ডের আঘাতজনিত রোগীদের বেশিরভাগ মারা যান। যারা বেঁচে থাকেন, পঙ্গুত্ব হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। এসব রোগীদের ৩৪.৬ ভাগ হুইল চেয়ার বা শয্যাশায়ী হয়ে যাচ্ছেন। তাদের আরেকটি বড় অংশ নিজ কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারেন না। এসব রোগীদের প্রায় ৬০ ভাগ স্থায়ী বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন। এটাকে জাতির জন্য বিরাট একটি বোঝা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

ডা. সালাহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত অটোরিকশা থেকে শুরু করে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। স্পাইনাল কড ইনজুরি নিয়ে দেশের একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন ডা. সালাহ উদ্দিন, যা ২০১২ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পরিচালিত হয়।

‘প্রতি তিন হাজার ২৮০ থেকে ছয় হাজার ৫৬০ জন আক্রান্ত হচ্ছেন। এর বড় একটি অংশ ঢাকা বিভাগ এবং তাদের অধিকাংশ ট্রমাটিক বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের কারণে হয়। যাদের পিঠে অথবা কোমরে আঘাত পেয়ে দুই পা প্যারালাইসিস অবস্থায় চিকিৎসার জন্য আসেন। আর যারা ঘাড়ে আঘাত পেয়ে আসেন, তাদের হাত-পান ও প্রশ্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়’—যোগ করেন তিনি।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নিউরো সার্জারি এই হাসপাতালের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। সবচেয়ে বেশি রোগী এবং সবচেয়ে জরুরি সেবা এই বিভাগ থেকেই সবসময় দেওয়া হয়। এই বিভাগের চিকিৎসকরা অত্যন্ত নিবেদিত এবং দক্ষ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাবোধ পোষণ করি। আমি মনে করি, তারা স্পেশাল।

আমি সবসময় চেষ্টা করেছি—এই বিভাগে কীভাবে আরও স্পেস দেওয়া যায়, কীভাবে আরও অপারেশন থিয়েটার (ওটি) বাড়ানো যায়। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখনো প্রত্যাশা অনুযায়ী সুবিধাগুলো বাড়াতে পারিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঁচ হাজার বেড স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। এর আগে সম্ভবত বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না।

তাই, আমাদের যেটুকু সুযোগ-সুবিধা বা ফ্যাসিলিটি আছে, সেটুকুকেই আমরা কতটুকু স্বীকৃতি দিচ্ছি, বা কতটা কাজে লাগাতে পারছি—সেটাই এখন মূল বিষয়।’

অনুষ্ঠানে নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহিদ রায়হান বলেন, গত বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে মেরুদেণ্ডর সমস্যা নিয়ে দুই হাজার ৩১৯ জন চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে শিশু, কিশোর থেকে পরিণত বয়সের মানুষ রয়েছেন।

ঢামেকে ২৪/৭ চিকিৎসাধীন রোগীদের সেবা চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব রোগীদের মধ্যে গত বছর এক হাজার ২৪২ জনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ডিস্ক প্রোলাপ্স, স্পাইনাল টিউমার, ট্রমা, স্পাইনাল ইনস্ট্রুমেন্টেশন ও জটিল ডিফরমিটি সংশোধনমূলক অস্ত্রোপচার রয়েছে।

পর্যাপ্ত জনবল থাকা সত্ত্বেও এ সংখ্যা বাড়াতে না পারার কারণ উল্লেখ করেন ডা. জাহিদ রায়হান। বলেন, পর্যাপ্ত অপারেশ থিয়েটার ও অ্যানেসথেশিওলজিস্ট পাওয়া গেলে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা দ্বিগুনের বেশি করা সম্ভব হবে এবং অস্ত্রোপচারে গতি আসবে।

এর আগে র‌্যালিপূর্ব আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢামেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, ‘আমরা হাত দিয়ে কাজ করি, পা দিয়ে হাঁটি। কিন্তু হাত দিয়ে কাজ করা এবং পা দিয়ে হাঁটার জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি প্রয়োজন, তা হলো মেরুদণ্ড (স্পাইন)। এটা আমরা অনেকেই জানি না, বুঝি না। অর্থাৎ মেরুদণ্ডে আঘাত লাগলে একজন মানুষ হাত দিয়ে কাজ করতে পারবেন না, পা দিয়ে হাঁটতেও পারবেন না। এই জন্যই হয়তো বলা হচ্ছে, মেরুদণ্ডে বিনিয়োগ করুন।

‘শিক্ষাকে যেমন জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়, তেমনি একজন মানুষের দৈনন্দিন কাজের জন্য তার মেরুদণ্ডও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেরুদণ্ডের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি’—বলেন ঢামেক অধ্যক্ষ।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিউরোসার্জারি বিভাগের ফ্যাকাল্টি সদস্য, রেসিডেন্ট, মেডিকেল অফিসার, নার্স এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস থেকে নিউরো স্পাইন নিয়ে জনসচেতনামূলক একটি র‌্যালি বের হয়ে ঢামেকের শহীদ মিনার সংলগ্ন গেট দিয়ে গিয়ে হাসপাতালের বাগান গেটে গিয়ে শেষ হয়।

এতে অংশ নেন ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যপক ডা. মো. কামরুল আলম, হাসপাতলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান, ঢামেকের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ রায়হান।
সূত্র : মেডিভয়েস

Leave A Reply

Your email address will not be published.