Take a fresh look at your lifestyle.

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাম্য মরন তো কমছে না

117

 

ডা. মাইনুল ইসলাম হাসিব :

বেদনাহত চিত্তে কিছু লিখছি। সজীবই প্রথম নয়, হয়তো শেষও নয় ! মেডিকেল শিক্ষার্থীর আত্মঘাত কিংবা ‘কাম্য- মরণ’ তো কমছে না। ড্রপআউটও বাড়ছে। এতো মেধাবীরা কেন প্রস্ফুটনের আগেই ঝরে পড়বে? দায়ী কে? কে দায়ী ? শিক্ষাব্যবস্থা নাকি অন্যকিছু ? মেডিকেল শিক্ষা যেমন দীর্ঘ তেমন কঠিনতমের একটি এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবাই যে তা মেনে নিয়ে ভর্তি হয় তা কিন্তু নয়। বাবা- মা, পরিবারের আকঙ্খা পূর্ণ করতে অনেকেই আসে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে। ফলে এক পর্যায়ে সে আর Own করতে পারেনা। অনেকে পারেনা মানসিক চাপ নিতে। আবার একবার পিছিয়ে পড়লে এতো বিশাল কারিকুলামে টিকে থাকার লড়াইয়ে ফেরত আসতে গিয়ে দুষ্টচক্রের মতো কেবল পেছাতেই থাকে অনেকে। সেজন্য আত্মহনন কেন? তবে কি এক রকম সাইকোপ্যাথিতে গিয়ে পৌছে কেউ কেউ ? হয়তোবা। পিছিয়ে পড়াদের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় ?

সবার আগে দায়ী করা হয় পরীক্ষাভীতিকে, অর্থাৎ শিক্ষাবয়বস্থা। বিশাল সিলেবাস, ভাইভা বোর্ডের আতঙ্ক ইত্যাদি। একটু পেছনে তাকানো যাক। পচিশ বছর আগে যে পদ্ধতি ছিল তখনতো তাহলে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটার কথা ছিল। আমি বহুবার পত্রিকায় লিখেছি। মৌখিক পরীক্ষা নির্ভরতা কমানো বা পদ্ধতি পরিবর্তন, এমসিকিউ যোগ করা ইত্যাদি। পরিবর্তন এক সময়ে হয়েছে কিন্তু আমরা তার সুফল ভোগ করতে পারিনি।

আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি এখন ভাইভাতে কাউকে ফেল করানো সত্যি কঠিন যদি না শিক্ষার্থী নিজে ফেল করে। আগে থেকে হাতে পাওয়া টানা প্রশ্নে উঠলো What is x ? Name 4 causes of x. প্রথম অংশে ১, পরের অংশে ৪। শিক্ষার্থী যদি definition না পারে কিন্তু cause পারে তাহলে কিন্তু ৪ নম্বর পাবে। অথচ আগের পদ্ধতিতে ওই definition না পারার কারণেই ফেল নিশ্চিত ছিল। সমস্যা হলো পরীক্ষকরা আগের পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেওয়া, ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত প্রশ্ন করেন যা করার কথা নয়। আবার আইটেম/ কার্ড পরীক্ষায় প্রফের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়না। ফলে ভীতি আগে থেকেই তৈরি হয়। একেক টিচার আবার আইটেম নেন ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে, কেউ ভাইভা, কেউ রিটেন, কেউ গণশুনানি। ফলে বিভিন্নতা তৈরি হয়, কঠিন গ্রুপে পড়া ছাত্র ছাত্রীরা ডিপ্রেশনে পড়ে। এমনি করা যায় এক লেকচারার একেক দিন একেক গ্রুপে পড়াবেন?

আমি মনে করি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভাইভা রাখা উচিৎ এবং বেশ ভালো নম্বরের। মানসিক চাপ নিতে পারা শিক্ষার্থীদেরই ভর্তি হওয়া উচিৎ। যতদিন না পরীক্ষা ব্যবস্থা আরো সহজ কিছু হয়। নাহয় কারিকুলাম আরো সহজীকরণ করা হোক।
অনেক শিক্ষার্থী পার্সেন্টেজের কারণে পরীক্ষায় বসতে পারেনা। পিছিয়ে পড়ে। এটা নিয়ে অভিযোগ আছে। কিন্তু এটা যদি নিয়ম হয় আর তা মানা হয় তাহলে বলার কি কিছু আছে ? কেন ছাত্র ছাত্রীরা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের সমস্যা। বিয়ে, অসুস্থতাতো আছেই। প্রশ্ন হলো যার উপস্থিতি ৫০% তাকে আটকালে পরের বার কি উপস্থিতি ৭৫% হবে? হলে কীভাবে হবে? যদি ন্যূনতম উপস্থিতি ৬০% করা হয় তাহলেও কি সবাই শর্ত পূরণ করতে পারবে ?

শিক্ষক হবেন বন্ধু, শিক্ষা হবে আনন্দময়। যদি মূর্তিমান আতঙ্ক হন তাহলেতো সমস্যাই। যদিও শেবাচিমের আতঙ্ক ছিলেন ক্যাপ্টেন স্যার। বেতের বাড়ি, কিল-ঘুসি, কানধরা সবই ছিলো। এক মেয়ে পড়া না পারায় তার চুলের বেণী স্যারের চেয়ারের পায়ার সাথে বেঁধে রেখেছিলেন। কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব আর পরীক্ষায় সহৃদয়তা তাকে মহানই করেছে। (যদিও এই জেনারেশনের কবলে পড়লে স্যারের কী দশা হতো জানিনা)। ইদানিং ক্লাসে অনুপস্থিতি বা অমনযোগী হওয়ার একটি কারণ হলো ইন্টারনেট নির্ভরতা। দেখা যায় টিচারের বা তার চেয়ে ভালো পড়ান এমন কারও লেকচার ইউটিউবে পাওয়া যায়। ফলে ক্লাসে না গেলেও চলে। এমনিতেই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে তার উপর অনুপস্থিতি, ফলে পরীক্ষার সময় টিচার চেনেননা স্টুডেন্ট, স্টুডেন্ট জানেনা টিচারের প্রশ্ন। ধমকা ধমকি। ফল- ডিপ্রেশন।

সজীবের মৃত্যুর জন্য দায়ী কর হয়েছে একজন শিক্ষককে। বিষয়টা হয়তো যৌক্তিক, হয়তো নয়। তবে আমি মনে করি একজন শিক্ষকও সাইকোপ্যাথিতে ভুগতে পারেন। লেকচারারদের মধ্যে ‘অতি শিক্ষকসুলভ’ প্রবনতা আমিও দেখেছি। অনেকে সাবজেক্টকে Own করেন না, অন্য বিষয়ে ক্যারিয়ার করেন আর বাধ্য হয়ে আরেক বিষয় পড়ান। হতাশা, ফ্রাস্টেশনে ভোগেন আর ছাত্র ছাত্রীদের সাথে যেনতেন আচরণ করেন। কিন্তু বিভাগের প্রধানরা কী করেন ? কোনো কি খোঁজ নেন কে কী কেমন পড়ান ? টিচিং মেথডলজি কি সবাই জানেন ?
বিপরীতে, আজ যে শিক্ষককে খুনি বলা হচ্ছে তিনি যদি সত্যি মানসিক সমস্যাগ্রস্ত হন এবং আল্লাহ না করুন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটান তার দায় কে নেবে?

এ দেশে জীবন না দিলে কোনো কিছু পরিবর্তন হয় না। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কি যথেষ্ট জীবন দেওয়া হয়নি ?
যেকোনো মৃত্যুই বেদনার। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আর কোনে আত্মহনন দেখতে চাইনা। শুনতে চাইনা কোনো হতাশার গল্পও। এজন্য যা কিছু করা দরকার তার জনয় রাজি থাকতে হবে সবার।

ডা. মাইনুল ইসলাম হাসিব
সহকারী অধ্যাপক,
অনকোলজি বিভাগ, শেবাচিমহা

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.