Take a fresh look at your lifestyle.

মাছ-দুধ একসঙ্গে খেলে কি সত্যিই ক্ষতি হয়?

৩৮

হেলথ ইনফো ডেস্ক :
আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় একটা কথা প্রচলিত আছে, মাছ খাওয়ার পর দুধ খাওয়া চলবে না। অনেকে আবার এতটাই ভয় পান যে, মাছ খেয়ে দই, আইসক্রিম বা কোনো দুগ্ধজাত খাবারের দিকেও তাকান না! কারণ ছোটবেলা থেকেই কানে কানে শুনে বড় হয়েছি, মাছ-দুধ একসঙ্গে খেলে নাকি শরীরে সাদা দাগ পড়ে, এমনকি শ্বেতী রোগ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

কিন্তু এই প্রচলিত ভয়ের পেছনে কি আদৌ সত্যতা আছে? নাকি এটা কেবল প্রজন্ম ধরে চলে আসা ভুল ধারণা? এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। চলুন দেখে নিই তাদের বিশ্লেষণ—

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদদের মতে, বিষয়টি যতটা ভয়াবহ বলে মনে করা হয়, বাস্তবে ততটাই সহজবোধ্য। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, এই দুই খাবারের সংমিশ্রণ স্বাভাবিকভাবে মোটেও ক্ষতিকর নয়, বরং ভীতির কারণ অনেকটাই কুসংস্কার ও ভুল ব্যাখ্যা।

তাহলে কেন এই ভুল ধারণা তৈরি হলো এবং কোন ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া দরকার? চলুন পুরো বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে দেখে নেওয়া যাক।

মাছ-দুধ একসঙ্গে বা পরপর খেলে কি সত্যিই ক্ষতি হয়? জানুন

১. প্রচলিত ধারণা : শ্বেতী রোগ হওয়ার ভয় কেন?

মাছের পর দুধ বা দই খেলে ত্বক সাদা হয়ে যায়, এটা বহু পুরোনো বিশ্বাস। কিন্তু শ্বেতী বা ভিটিলিগো আসলে একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ত্বকের রঙ তৈরির কোষ ধ্বংস করে দেয়। খাদ্যতালিকায় মাছ-দুধ থাকার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

বিশেষজ্ঞরা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল ধারণা এবং একসঙ্গে খাওয়ার ফলে শ্বেতী রোগ হয় না।

২. খাদ্যতত্ত্ব কী বলছে? সংমিশ্রণ কি আসলেই ক্ষতিকর?

পুষ্টিবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মাছ ও দুধের সংমিশ্রণ সম্পূর্ণ নিরাপদ। পৃথিবীর বহু জনপ্রিয় খাবারেই এ সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয় :

ক্ল্যাম চাউডার বা সিশেল স্যুপ, যেখানে মাছ/শেলফিশের সঙ্গে দুধ ও ক্রিম ব্যবহৃত হয়।

ফ্রাইড ফিশের সঙ্গে মেয়োনিজ বা দইয়ের সস, যা পশ্চিমা খাদ্য সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিনের প্রচলিত। অর্থাৎ, বিশ্বজুড়ে মানুষ বহুদিন ধরে মাছ ও দুগ্ধজাত খাবার নির্ভয়ে খেয়ে আসছে।

৩. তবে কোন ঝুঁকি থাকতে পারে?

শ্বেতী রোগের ভয় ভুল হলেও কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কারণ মাছের প্রোটিন দ্রুত হজম হয়। অন্যদিকে দুধের কেজিন প্রোটিন হজম হতে সময় নেয়।

উভয়ই একসঙ্গে বা পরপর গ্রহণ করলে পেটের ওপর প্রোটিনের চাপ বাড়তে পারে। বিশেষত যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে তাদের গ্যাস, পেট ফাঁপা, অস্বস্তি, অম্লতা দেখা দিতে পারে। তবে এটি শ্বেতী রোগ নয়, এটি শুধুই স্বাভাবিক হজমজনিত প্রতিক্রিয়া।

৪. কেন এই ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়ল?

ধারণা করা হয়, আগে খাবার সংরক্ষণ ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় মাছ বা দুধ নষ্ট হয়ে যেত। আর নষ্ট খাবার খেলে ত্বকে অ্যালার্জি, সাদা বা লাল ছোপ ও র‍্যাশ দেখা যেত। মানুষ ভুলবশত এটিকে শ্বেতী রোগ ধরে নেয় এবং কুসংস্কারটি প্রজন্ম ধরে ছড়িয়ে পড়ে।

শেষকথা

মাছ খাওয়ার পর দুধ বা অন্য দুগ্ধজাত খাবার খেলে শ্বেতী রোগ হওয়ার ভয় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তবে যাদের হজমতন্ত্র দুর্বল বা দুধ সহ্য করতে পারেন না, তারা এই দুই প্রোটিন-সমৃদ্ধ খাবার একসঙ্গে না খেলেই ভালো।
সূত্র : কালবেলা

Leave A Reply

Your email address will not be published.