Take a fresh look at your lifestyle.

মহারথী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ একেএম মশিউল মুনীর স্যার বেঁচে থাকুক শত-শতাব্দীকাল পর্যন্ত

মন্তব্য প্রতিবেদন

১৪৭

মো: তৌহিদুর রহমান জুয়েল :

আমার শৈশব-কৈশোর কাটানো, আমার সাঁতার শেখা, আমার সন্তানের মতো আমারও শৈশবে সাইকেলিং করা, আমার বেড়ে ওঠার স্থান বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল এরিয়া। তাইতো এই কলেজ ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল চত্বর আমার আবেগের স্থান। একে নিয়ে লিখতেও পছন্দ করি।

বৃহত্তর বরিশাল বিভাগ তথা দক্ষিণবাংলার সর্ববৃহৎ রোগীসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, দূর-দূরান্ত থেকে আগত অসহায় মুমুর্ষ রোগীদের সরকারি ভাবে সু-চিকিৎসা গ্রহণের আশ্রয়স্থল, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

 

সুদীর্ঘ বছর যাবৎ জরাজীর্ণ, ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত, অপ্রতুল প্রবীণ ও নষ্ট রোগ নির্ণয়ের মেশিনারিজ সরঞ্জাম, হাসপাতালের অভ্যন্তরে ও বাহিরে অপরিষ্কার অপরিছন্ন, অপর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডাক্তার, নার্স, আয়া ও সকল স্বাস্থকর্মীর অভাব, প্রয়োজনীয় ঔষধ-পথ্যের অভাব,  সর্বোপরি দৈন্যদশার মইধ্যে দিন কাটাচ্ছিল আমাদের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে, সাতান্ন বছরের পুরোনো নিয়ম ভেঙে, (জেনারেল থেকে ডিফেন্স) হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী পরিচালকের প্রশাসনিক দায়িত্বে আসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস, বিচক্ষণ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ একেএম মশিউল মুনীর স্যার।

 

মহারথীর নব দায়িত্বে আমাদের বরিশালবাসীর আশা-আকাঙ্খা এবং বিশ্বাসের পুনুরুত্থান ও পুনুরুজ্জীবিত হয়েছে। মাত্র কয়েকমাসের ভেতরেই তিনি তার অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে আপামর অবহেলিত ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত বরিশালবাসীর বিশ্বাস ও আস্থার স্থান দখলে নিয়েছেন।

 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ একেএম মশিউল মুনীর স্যার পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণের পরে কলেজ ও হাসপাতাল চত্বর থেকে সবরকমের ময়লা আবর্জনা অপসারণ করা হয়, হাসপাতালের দূষিত বর্জ্যের অপসারণ ও সুব্যাবস্থাপনা করেছেন, সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশ রক্ষার্থে সবুজের সমারোহ ঘটিয়ে বৃক্ষরোপন করেছেন, বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে আগত অবৈধ স্টাফ ও দালালমুক্ত করেছেন, হাসপাতালের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দিতে যান-বাহন  চলাচলের সুন্দর নিয়ম ও হাসপাতালের এম্বুলেন্স রাখার স্থান নিদৃষ্ট করে দিয়েছেন, আগে যে মাঠে স্থানীয়দের গবাদিপশু ও ছাগল চড়ানো হতো, সেখানে আজ রোগীদের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে হাঁটার জন্য ওয়াক-ওয়ে তৈরী করেছেন, হাসপাতালকে সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি নন্দন করতে তৈরী করেছেন দৃষ্টি নন্দন পানির ফোয়ারা,

এতক্ষনতো হাসপাতালের বাহিরের কথা বলেছি, এখন বলবো হাসপাতালের অভ্যন্তরে পরিবর্তনের কথা….

 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ একেএম মশিউল মুনীর স্যার প্রথমেই দক্ষ জনবল দিয়ে হাসপাতালের অভ্যন্তরে ময়লা আবর্জনা ও দুর্গন্ধ মুক্ত করণ সহ অন্যান্য অব্যবস্থাপনা নির্মূলের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। আধুনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালের ন্যায় সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রূপ দিয়েছেন ভঙ্গুর জরাজীর্ণ শেবাচিম হাসপাতালকে। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করেছেন অন্ধকারে নিমজ্জিত রুমগুলো। বরিশালবাসীর বহুদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে নতুন রূপে আধুনিক সরঞ্জাম সজ্জিত আধুনিক মানের সিসিইউ ওপেন করেছেন, ফলস্বরূপ রোগীদের ঢাকামুখী না করে, দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থা করেছেন, হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়ার প্রত্যয়ে নতুন হেমাটোলজি ল্যাব, অটোমেশন ল্যাব এবং ৯ টি অত্যাধুনিক সম্পূর্ণ অটোমেটিক প্যাথলজি, বায়োকেমিস্ট্রি এবং হেমাটোলজি পরীক্ষা করার অত্যাধুনিক যন্ত্রের শুভ উদ্বোধন করেন।

 

অসুস্থ রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে না থেকে বরং শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে সুসজ্জিত চেয়ারে বসে থেকে, আধুনিক হাসপাতালের ন্যায় প্যাথলজিক্যাল স্যাম্পল প্রদান ও সংগ্রহ বুথ এবং সম্পূর্ণ অটোমেটেড ল্যাব সিস্টেমতৈরী করা হয়েছে। পুরোনো টয়লেট সংস্কার করে পুরুষ ও মহিলা রোগীদের জন্য আলাদা সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন টয়লেট তৈরী করা হয়েছে,

রোগীসেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হাসপাতালের পুরোনো কেবিন সংস্কার করে নবরূপ দিয়ে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্মিলিত ও আধুনিক মানসম্পন্ন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ২২ টি কেবিন ব্লক তৈরী করা হয়েছে,

হাসপাতালে বন্ধ হয়ে যাওয়া ডাক্তার কেন্টিন রুম, স্বেচ্ছায় রক্ত সংগ্রহ ও প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান  সন্ধানী শেবাচিম ইউনিট রুম, মেডিসিন ক্লাব রুম ও রেড-ক্রিসেন্ট ক্লাব রুম সংস্কার করে নতুনত্ব রূপ দেয়া হয়।

সর্বোপরি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: মশিউল মুনির স্যার হাসপাতালের আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা ও ডাক্তারদের সুন্দর ও সুস্থ ভাবে রোগী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করেন।

 

শ্রদ্ধেয় মশিউল মুনির স্যার একটি অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত, অসুস্থ হাসপাতালকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও গুণগত মানসম্পন্ন হাসপাতালে রূপান্তর করে, সু-ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা করে, রোগী বান্ধব ও সু-চিকিৎসা গ্রহণের আশ্রয়স্থল হিসেবে তৈরী করে, শেবাচিম হাসপাতালকে উচ্চ থেকে উচ্চতর শিখরে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

 

একটা কথা আমাদের সকল বারিশালবাসীকে মনে রাখতে হবে এই শেবাচিম হাসপাতাল আমাদের সম্পদ, আর এই হাসপাতালকে সুন্দর, দুর্গন্ধমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও প্রকৃত রোগীসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

হাসপাতালকে রোগীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে, মুমূর্ষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগত রোগীদের পর্যাপ্ত বিছানা ও অন্যান্য সরন্জাম নিশ্চিত করতে হবে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি নিশ্চিত করতে হবে। আগত অসুস্থ মুমুর্ষ রোগীদের অবজ্ঞা করা ও সময়মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে অবহেলাকারী ডাক্তার মহোদয় ও সাস্থকর্মীকে চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং তাকে সসম্মানে অন্যত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

 

সম্মানিত পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: মশিউল মুনির স্যার এবং হাসপাতালের সম্মানিত সহকারী পরিচালক সহ অন্যান্য সকল চিকিৎসক বৃন্দ, হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, নির্মাণ, প্রস্তুত ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাক্তিবর্গ যারা হাসপাতালকে উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার কাজে জড়িত, সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

 

মো: তৌহিদুর রহমান জুয়েল

দক্ষিণ আলেকান্দা, বরিশাল।

সাবেক জিএস ও ভিপি,

সন্ধানী ডোনার ক্লাব, সরকারি বিএম কলেজ, বরিশাল।

সাবেক যুব প্রধান,

যুব রেডক্রিসেন্ট, বরিশাল জেলা ইউনিট,

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.