Take a fresh look at your lifestyle.

বিএমইউর গবেষণা বলছে: অকার্যকর হয়ে পড়ছে বহু অ্যান্টিবায়োটিক, চিকিৎসায় নতুন সংকটের আশঙ্কা

৬০

হেলথ ইনফো ডেস্ক :

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক–নির্ভরতা নতুন সংকটের দিকে যাচ্ছে—এমনই চিত্র উঠে এসেছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) এক বছরের বিশদ গবেষণায়। মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের উদ্যোগে করা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেফট্রিয়াক্সোন, জেন্টামাইসিন, মেরোপেনেম ও টিগেসাইক্লিনসহ বহু অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। রোগীর দেহে তৈরি হওয়া রেজিস্ট্যান্সের কারণে এসব ওষুধে সংক্রমণ সাড়ছে না, চিকিৎসার সময়ও দীর্ঘ হচ্ছে—বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিএমইউতে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ–২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট ২০২৪–২০২৫’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। ‘এখনই পদক্ষেপ নিন—বর্তমানকে রক্ষা করুন, ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করুন’ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ সপ্তাহব্যাপী সচেতনতা কর্মসূচি পালন করছে।

গত এক বছরে রোগীর ৪৬ হাজার ২৭৯টি নমুনা বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা জানান—
অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ও ভুল ব্যবহারের কারণে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক দ্রুত ওষুধ–প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। ফলে সাধারণ সংক্রমণও কঠিন হয়ে পড়ছে, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, “অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই নেতৃত্ব নিতে হবে। গবেষণা, গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিএমইউকে পথ দেখাতে হবে।’’

ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন,
“আগামী ১০–১৫ বছরের মধ্যে মানবজাতি আবার সেই যুগে ফিরে যেতে পারে, যখন ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ থাকবে না—এটি এখন বৈশ্বিক মহাবিপর্যয়ের মতো।”

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার। তিনি বলেন, “অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, নিজে নিজে ওষুধ সেবন ও অসম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণই এএমআর সংকট বাড়াচ্ছে। হাত ধোয়া, টিকাদান, সঠিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি মানলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।”

প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এএমআর ভয়াবহ রূপ নিয়েছে; এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”

এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহীম সিদ্দিক, শিশু বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. আতিয়ার রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত, নবজাতক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল মান্নান, শিশু হেমাটোলজি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল করিম, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুনসহ আরও অনেকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তিসংগতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার না করলে আগামী দিনে সংক্রমণ চিকিৎসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হতে পারে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.