Take a fresh look at your lifestyle.

বঙ্গোপসাগরীয় প্যারাডক্স এবং গনতান্ত্রিক অপরিহার্যতা

(Only for academic discussion)

99

 

রেজওয়ান রেজা :

১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে পারভেজ মোশারফের ক্যু এর কথা কি আমাদের মনে আছে? বিপুল ভোটে নির্বাচিত একটি সরকারকে উচ্ছেদ এর গ্রাউন্ড প্রিপারেশনে সম্পূর্ন অর্থহীন কারগিল যুদ্ধ শুরু করেছিল জেনারেল পারভেজ মোশারফ এবং যুদ্ধে পিছু হটলেও তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে তা কোন বাধা হয় নি। ১৯৯৯ এর অক্টোবরে জেনারেল ক্ষমতা নিয়েছিল, সংবিধান রদ করেছিল, প্রেসিডেন্ট কে অপসারন করেছিল। বর্তমান বাংলাদেশেও একটি গ্রুপ সংবিধানকে একদম দাড়ি কমা সহ বিলুপ্ত করে, প্রথম প্রেসিডেন্ট কে উচ্ছেদ এর দাবিতে সোচ্চার, কিন্তু তাদের একটি কথা মাথায় রাখা উচিত পাকিস্তানে ১৯৪৭ থেকে এই সব ঘটনা বার বার ঘটলেও কোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে নাই বরং দেশ অকার্যকর হয়েছে। অপর দিকে ভারত তার নির্বাচনী ব্যবস্থা ধরে রাখায় ইরর এন্ড কারেকশনের ক্রমাগত যাত্রা এগিয়েছে। ফিরে যাওয়া যাক ৯৯ এর পাকিস্তানে। সালটি ৯৯, মনে রাখতে হবে এর দুই বছর পরই মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক জঘন্য অধ্যায়ের সূত্রপাত হতে যাচ্ছে, ৯/১১ এবং এর পরের ওয়ার অন টেরর নামে মুসলিম নিধনের জন্য যেন পাকিস্তানকে তৈরি করা হচ্ছিল,আর তাই একটি গনতান্ত্রিক সরকারের স্থলে বসান হয়েছিল পারভেজ মোশারফ কে। এরপরের ইতিহাস আমরা জানি, পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে এবং লক্ষাধিক পাকিস্তানী নিহত হয়েছন। পাকিস্তানের আজকের অবস্থার জন্য যদি দায় কিছুর হয় তবে সেটা হচ্ছে তার গনতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।

এবার ফিরে আসা যাক ২০২৫ এর বঙ্গোপসাগরের তীরে। ভূ রাজনীতিতে যেই মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্র “ক্লাশ অফ সিভিলাইজেশন” ফাইল বন্দী করে “চায়না কন্টেইনমেন্ট” এ এসেছে, সেই মুহুর্তে পাকিস্তান আফগানিস্তান এর গুরুত্ব কমে যেয়ে গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরের। ওয়ার্ল্ড অর্ডারের হাত বদল হচ্ছে, আর তার প্রসব বেদনায় রক্তাক্ত হচ্ছে ইউক্রেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে রাখাইন, সর্বত্র। এই টাল মাটাল অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে খেলছে চীন, আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী ইন্ডিয়া আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ক্লাশ অফ সিভিলাইজেশনের টাইমে মার্কিন নেতৃত্বে যে অন্তহীন ওয়ার অন টেরর এর নাম দিয়ে মুসলিম নিধন চলছিল, হিন্দুত্ববাদী ভারত তাতে পূর্ন সমর্থন দিয়ে বঙ্গোপসাগরের তালুক নিয়ে নিয়েছিল। এবং এই অঞ্চলের প্রতিটা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির বৃথা চেষ্টা করেছে, এতে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধির বদলে সব দেশে তীব্র ভারত বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিনিরাও বুঝতে পেরেছে যে ওয়ার অন টেররে যুক্ত হিয়ে তারা অর্থনৈতিক এবং ওয়ার্ল্ড অর্ডারে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অপর দিকে উত্থান ঘটেছে চীনের। এ অবস্থায় তারা এটাও বুঝেছে ভারত নিজেকে পরাশক্তি বানানর স্বপ্নে বঙ্গোপসাগরীয় প্রতিটা দেশে নিজেরা উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে একি সাথে মার্কিন প্রভাব দুর্বল করেছে আর অন্য দিকে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই চায়না কন্টেইমেন্ট এর জন্য ভারতের তালুক বিলুপ্ত করে নিজেরাই খেলতে নেমেছে।

 

বার্মা এক্ট
মিয়ানমারের জান্তা সরকার বঙ্গোপসাগরে এক অদ্ভুত প্যারাডক্সের সৃষ্টি করেছে। একি সাথে দুই আর্চ রাইভাল ইন্ডিয়া আরচীনের সাথে সম্পর্ক রেখে চলছিল এবং আরাকানে রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে সেই স্থানে চীন আর ইন্ডিয়ার ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। কিন্তু আরাকান আর্মি রাখাইন প্রভিন্স দখল করে নিলে তারা মার্কিনিদের গুড বুকে চলে আসে। ইন্ডিয়া যতই মার্কিনপন্থী হোক বঙ্গোপসাগরে ডিরেক্ট মার্কিন উপস্থিতি চীন ইন্ডিয়া কেউই চাচ্ছে না। দুই আর্চ রাইভাল এই ইস্যুতে এক হয়ে যাওয়ায় মার্কিনিরা নিজেরাই খেলতে নেমেছে এবং বলার অপেক্ষা রাখে না ৯৯ এ পাকিস্তান যেপয়েন্টে ছিল বাংলাদেশ আজ সেই পয়েন্টে আছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বদলে বাইডেন প্রশাসন থাকলে এতদিনে পরিস্থিতির আর কিছু নাটকীয় মোড় দেখা যেত এবং বাংলাদেশীরা কোন যুদ্ধ না চাইলেও যুদ্ধ ঘাড়ে চলে আসত।

 

গনতান্ত্রিক অপরিহার্যতা
পৃথিবীর কোন গনতান্ত্রিক সরকার আজ পর্যন্ত নিজের দেশ বিক্রি করে নাই,চাইলেও পারে নাই। কারন তারা দায়বদ্ধ থাকে দেশের জনগনের প্রতি। ইন্ডিয়া বাংলাদেশকে করদরাজ্য বানাতে এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে একটি এজেন্ট বসিয়ে রেখেছিল। গন অভ্যুত্থানে এবং চায়না কন্টেইনমেন্ট এর উত্তাল ঝড়ে সেই এজেন্ট পরাজিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে আমরা আবার পরাশক্তিদের লড়াই এর প্রক্সি ওয়ার ফিল্ডে পরিনত হব কিনা। এবং এই অবস্থায় একটা গনতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারই পারে পরাশক্তিকে মোকাবিলা করতে। এটা কেউ না বললেও সবাই জানে বর্তমান সরকার এর ক্ষমতার উথস পশ্চিম, তাই পশ্চিমাদের চাওয়া পাওয়ার জন্য তারা চাক বা নাচাক তাদের বাধ্য বাধকতা থাকবে। অপর দিকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থায় চীন হচ্ছে একমাত্র রিলিভার। তাকেও সন্তুষ্ট রাখা দরকার। ইন্ডিয়া তার হাতছাড়া হয়ে যাওয়া করদরাজ্যে প্রভাব ফিরে পেতে মরিয়া। এ অবস্থায় সকলের সমন্বয়ে একটি গনতান্ত্রিক সরকারই পারে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.