Take a fresh look at your lifestyle.

দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার বিএমইউতে উদ্বোধন

32

বরিশাল হেলথ ইনফো ডেস্ক :
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধীনে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ রোববার (৩১ আগস্ট) সকালে বিএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে বেইজমেন্টে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়।

পরে বিএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্বে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার গ্যালারিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যখন চীনে যান, তখন তাদের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে কথা হয়। এর মধ্যে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল রয়েছে, যা রংপুরে নির্মিত হবে।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, সফরে জুলাইয়ের আহতদের চিকিৎসার জন্য চীনের কাছে ১০-১২টি রোবট চেয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু তারা ৫৭টি রোবট উপহার দিয়েছেন, যা অপ্রত্যাশিত। একই সঙ্গে বাংলাদেশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জনকে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন তারা।

এ সময় রোবোটিক সেন্টার সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

জুলাই অভ্যুত্থানের পাশাপাশি মাইলস্টোন কলেজের বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় চীন সহযোগিতা করেছে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি স্থানান্তরের কেন্দ্র হয়ে উঠুক।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত মিস্টার ইয়ো ওয়েন। তিনি স্বাস্থ্যসহ যে কোনো বিষয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি রোগীদের চীনে সাদর আমন্ত্রণ জানান।

অনুষ্ঠানে বিএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান ও রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ শাকুর বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ মানুষ স্ট্রোক, সড়ক দুর্ঘটনা, স্নায়বিক রোগ, মেরুদণ্ডের আঘাত ও দীর্ঘমেয়াদি পঙ্গুত্বের মতো জটিল সমস্যায় ভোগেস। দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন চিকিৎসা অনেকের জন্য দুঃসাধ্য ও ব্যয়বহুল। এরই মধ্যে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের রোবোটিক থেরাপির অভাবে বিদেশে পাঠাতে হয়েছিল।

‘এই অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে একটি বাস্তব চিত্র স্পষ্ট করে দেয়—বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও আধুনিক রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন ব্যবস্থা চালু করা সময়ের দাবি’—যোগ করেন তিনি।

ডা. এম এ শাকুর বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন বিশেষ করে যাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন তারা এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সকল ধরনের স্ট্রোকের রোগী, নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার বা স্নায়ুবিক বৈকল্য, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, প্যারালাইসিসজনিত সমস্যা, ফ্রোজেন শোল্ডার, নার্ভের ইনজুরির ফলে দুর্বলতা, অবশজনিত সমস্যা, শরীরের কোথাও শক্ত হয়ে যাওয়া, অ্যাক্সিডেন্ট ও ইনজুরিজনিত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা—এ রকম অসংখ্য রোগ ও সমস্যায় ভোগা দেশের মানুষ এই সেন্টার থেকে চিকিৎসাসেবা পাবেন। এ ধরনের রোগীরা এই সেন্টার থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন।

অধ্যাপক ডা. শাকুর বলেন, উন্নত বিশ্বে ব্যবহৃত প্রযুক্তি অনুসরণ করে চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এই সেন্টারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় বৃহত্তম রোবোটিক সেন্টার। এই সেন্টারে চীন সরকার প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক রোবটিক যন্ত্রপাতি দিয়েছে, যা এই কেন্দ্রকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক রোবোটিক রিহ্যাব সেন্টারে পরিণত করেছে। সেন্টারটিতে মোট ৫৭টি রোবট রয়েছে, এর মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই)। রোগীর অবস্থান ও প্রয়োজন অনুযায়ী এসব রোবট অত্যন্ত নির্ভুলভাবে ফিজিওথেরাপি, স্নায়ুবিক চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করতে পারবে।

তিনি বলেন, এই কেন্দ্র পরিচালনার জন্য চীনের সাত সদস্যবিশিষ্ট বায়োমেডিক্যাল বিশেষজ্ঞ দল ইতোমধ্যে ২৯ জন দেশীয় চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই পুনর্বাসন কেন্দ্র বিশেষভাবে উপকারে আসবে স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, নার্ভ ইনজুরি, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, দুর্ঘটনাজনিত দুর্বলতা, ফ্রোজেন শোল্ডারসহ বিভিন্ন স্নায়ুবিক রোগে আক্রান্তদের। হাতের সুক্ষাতিসুক্ষ কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা রোগীদের সক্ষমতা ফেরাতে এই সেন্টার ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, বিএমইউ ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। রোগীদের বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশাবাদী।

পরে রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্টদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান করেন প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের বেইজমেন্টে স্থাপিত সর্বাধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার পরিদর্শন ও উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, যা লেকচার গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরা প্রজেক্টরের মাধ্যমে সরাসরি দেখতে পান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২৪ সালে জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হয়ে যারা এখনো পঙ্গুত্বের সঙ্গে লড়ছেন, তাদের জন্য বিনামূল্যে এই রোবটিক চিকিৎসাসেবা ইতিমধ্যে শুরু করেছে। এখন থেকে এই চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম সাধারণ রোগীদের জন্যও উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেবার খরচ রোগীদের সামর্থের মধ্যে থাকবে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার, বেসিক সাইন্স ও প্যারাক্লিক্যাল সাইন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. শামীম আহমেদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহীম সিদ্দিক, ডেন্টাল অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাখাওয়াত হোসেন, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মোহাম্মদ আবু নাছের, উপ-পরিচালক (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) ডা. এ কে আল মিরাজ, সহকারী প্রক্টর ডা. শাহরিয়ার শামস লস্কর, সহকারী প্রক্টর ডা. রিফাত রহমান প্রমুখসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিএমইউর ডিনবৃন্দ, বিভাগীয় চেয়ারম্যানবৃন্দ, অফিস প্রধানগণ, ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের শিক্ষক, চিকিৎসকবৃন্দ ও রেসিডেন্টবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.