Take a fresh look at your lifestyle.

টাইফয়েড টিকা সম্পর্কে যেসব উত্তর জানা জরুরি

১০৯

বরিশাল হেলথ ইনফো ডেস্ক :
সারা দেশে প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে এই কর্মসূচির আওতায় বিনা মূল্যে একটি ডোজ ইনজেকটেবল টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে।

টিকা গ্রহণের জন্য অভিভাবকদের https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। গত ১ আগস্ট থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। নিবন্ধনের পর জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করে রাখতে হবে।

তবে টাইফয়েড টিকা নিয়ে যেসব উত্তর জানা জরুরি

১. টাইফয়েড জ্বর কী? কীভাবে এই রোগ ছড়ায়?

উত্তর : বাংলাদেশে সংক্রমণজনিত রোগের অন্যতম প্রধান কারণ টাইফয়েড। টাইফয়েড জ্বর “স্যালমোনেলা টাইফি” নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।

২. টাইফয়েড প্রতিরোধে টিসিভি (Typhoid Conjugate Vaccine) টিকা কি কার্যকর ও নিরাপদ?

উত্তর: হ্যাঁ, টিসিভি খুবই নিরাপদ ও কার্যকরী। সারা বিশ্বব্যাপী এই টিকা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ছাড়াই শিশুরা গ্রহণ করছে। পাকিস্তান, নেপাল ও বিভিন্ন দেশে এই টিকা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত টিসিভি টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক যাচাইকৃত (Prequalified)। টিসিভি টিকা দেওয়ার পর সামান্য প্রতিক্রিয়া, যেমন: টিকা দেওয়ার স্থানে চামড়া লাল হওয়া, ফুলে যাওয়া, সামান্য ব্যথা, অল্প জ্বর, মাথা ব্যাথা, ক্লান্তি ভাব, এবং মাংসপেশিতে ব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে; যেগুলো এমনিতেই ভালো হয়ে যায় ।

৩. ক্যাম্পেইনে টাইফয়েড টিকা কারা নিতে পারবেন?

উত্তর : টিকাদান ক্যাম্পেইন চলাকালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি/সমমান পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবহির্ভূত ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিদ্যমান ইপিআই স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে এই টিকা দেওয়া হবে।

৪. টাইফয়েড টিকা শরীরের কোথায় প্রদান করা হয়?

উত্তর : ২ বছর এবং তার কম বয়সী শিশুদের ০.৫ এমএল পরিমাণ টিকা ঊরুর মধ্যভাগের বাইরের অংশের মাংসপেশিতে এবং ২ বছরের অধিক বয়সীদের বাহুর উপরিভাগে বাইরের অংশে সমপরিমাণ ডোজ ডেল্টয়েড মাংসপেশিতে দেওয়া হয়।

৫. শুধু শিশুদের কেন টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে?

উত্তর : বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই টাইফয়েড রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে । টিসিভি ১ ডোজ টিকা এই বয়সে দিলে অধিক মাত্রায় রোগ প্রতিরোধ করে। সে জন্য এই ক্যাম্পেইনে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের এই টিকা দেওয়া হবে। পরে শুধু ৯ মাস বয়সী শিশুদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে এই টিকা দেওয়া হবে।

৬. ১৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ কি এই টিকা গ্রহণ করতে পারবে?

উত্তর : সরকারি উদ্যোগে এই ক্যাম্পেইনে শুধু ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১ ডোজ টিকা দেওয়া হবে। ১৫ বছরের অধিক বয়সী যেকোনো ব্যক্তি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিজ ব্যবস্থাপনায় এই টিকা গ্রহণ করতে পারবে।

৭. টিসিভি টিকা দিলে কি টাইফয়েড সংক্রমণ অথবা টাইফয়েড জ্বর হবে না?

উত্তর : সংক্রমণের পূর্বে এই টিকা গ্রহণ করলে পুনরায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় এবং পরে টাইফয়েড জ্বর হলেও জটিলতা সৃষ্টি হয় না।

৮. মেয়েদের এই টিকা দিলে বিয়ের পর সন্তান ধারণে কোনো সমস্যা হবে কি?

উত্তর : টিসিভি টিকা অত্যন্ত নিরাপদ এবং কার্যকর। এই টিকা নারীর গর্ভকালীন জটিলতা, প্রজননক্ষমতা হ্রাস কিংবা সন্তান ধারণে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না বরং এই টিকা টাইফয়েড জ্বর হতে সুরক্ষিত রাখে।

টাইফয়েড টিকা : যেসব উত্তর জানা জরুরি

৯. গর্ভবতী কিশোরী বা দুগ্ধদানকারী মা কি এই টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করতে পারবেন?

উত্তর : না। গর্ভাবস্থায় বা দুগ্ধদানকারী মাকে এই টিকা দেওয়া যাবে না।

১০. টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় একজন রোগী এই টিকা গ্রহণ করতে পারবে কি?

উত্তর : না, টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় এই টিকা গ্রহণ করা যাবে না। তবে জ্বর থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পর এই টিকা গ্রহণ করা যাবে।

১১. আগে টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময়ে কি টিকা গ্রহণ করা যাবে?

উত্তর: হ্যাঁ, গ্রহণ করা যাবে।

১২. টাইফয়েড টিকা গ্রহণের সঙ্গে অন্য টিকা গ্রহণের সম্পর্ক আছে কি?

উত্তর : টাইফয়েড টিকা গ্রহণের সময়, অর্থাৎ একই সঙ্গে আগে কিংবা পরে অন্য যেকোনো টিকা গ্রহণ করা যাবে।

১৩. আগে টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করে থাকলে এই ক্যাম্পেইনে কি পুনরায় এই টিকা গ্রহণ করা যাবে?

উত্তর : ৯ থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা আগে টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করে থাকলেও ক্যাম্পেইন চলাকালীন তাদেরেএক ডোজ টাইফয়েড টিকা অবশ্যই নিতে হবে।

১৪. টাইফয়েড ক্যাম্পেইন চলাকালীন নির্ধারিত এলাকার বাইরের কোনো ছাত্র-ছাত্রী/শিশু যদি টিকা নিতে আসে, তবে তাকে টিকা দেওয়া যাবে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, দেওয়া যাবে।

১৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত টিকাদান সেশনে কোনো ছাত্র বা ছাত্রী অনুপস্থিত থাকলে সে কি আর টাইফয়েড টিকা নেওয়ার সুযোগ পাবে?

উত্তর : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট দিনে ছাত্র-ছাত্রী টাইফয়েড টিকা পাওয়া থেকে বাদ পড়লে ক্যাম্পেইন চলাকালীন যেকোনো নিয়মিত/স্থায়ী ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে।

১৬. কমিউনিটির নির্ধারিত টিকাদান সেশনে কোনো শিশু টিকা নিতে পারেনি; তাহলে সে কি আর টাইফয়েড টিকা নেওয়ার সুযোগ পাবে?

উত্তর : হ্যাঁ, পাবে। ক্যাম্পেইন চলাকালীন যেকোনো ইপিআই টিকাদান কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবে।

১৭. এই টিকা কি সরকারি উদ্যোগে প্রদান করা হবে?

উত্তর : হ্যাঁ, এক ডোজ টাইফয়েড টিকা বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে নির্ধারিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ইপিআই টিকাদান কেন্দ্ৰসমূহে বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

১৮. টিকা গ্রহণের সময় হঠাৎ দেখা যায়, একই সঙ্গে অনেক কিশোরী অসুস্থতা বোধ করে বা অজ্ঞান হয়ে যায়; অনেক ক্ষেত্রে তাদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। এর কারণ কী? এটি কি ভয়ের কিছু?

উত্তর : না, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে Mass Psychogenic IIIness বলে, যা মূলত টিকা গ্রহণের আগে বা পরে মানসিক ভীতিজনিত কারণে একটি প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এর ফলে একজন কিশোরী অসুস্থ বোধ করলে অন্য অনেক কিশোরীও ভয় পেয়ে অসুস্থ বোধ করে, যা সম্পূর্ণ মানসিক কারণ; এর সঙ্গে টিকাজনিত অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই।

সূত্র : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

Leave A Reply

Your email address will not be published.