Take a fresh look at your lifestyle.

এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা একই প্রশ্নপত্রে , মান বণ্টনে যা থাকছে

৯৫

হেলথ ইনফো ডেস্ক :
সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি প্রক্রিয়ায় আসছে কিছু টেকনিক্যাল এবং নীতিগত পরিবর্তন। প্রশ্নপত্র কাঠামো ও মান বণ্টনে থাকছে নতুনত্ব। বিশ্লেষণী দক্ষতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিত্বমূলক দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হচ্ছে পরীক্ষার প্রশ্ন।

রোববার (১৯ অক্টোবর) এ বিষয়ে কথা বলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন।

অভিন্ন প্রশ্ন পূর্বেও ছিল

তিনি বলেন, ‘এবার এমবিবিএস এবং বিডিএসের একটি ভর্তি পরীক্ষা আলাদা হবে না, একটাই পরীক্ষা হবে। আগেও এমনই ছিল, একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতো। পরে এটা ভাগ করে দুটি করা হয়েছিল। এখন আমরা যেহেতু দুটি পরীক্ষা পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি, তাই হঠাৎ করে একটি পরীক্ষায় আসাতে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।’

তবে এর সুবিধা ও অসুবিধা দুইই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুবিধা হলো, একজন শিক্ষার্থীকে দুইবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে না, দুইবার পরীক্ষার ফি দিতে হচ্ছে না। এটা অবশ্যই একটি বাড়তি সুবিধা। আবার দুইটি পরীক্ষার আয়োজন করা হলে সুবিধাজনক একটি দিক ছিল। তাহলো অনেক শিক্ষার্থী একটাতে খারাপ করলেও অন্যটাতে ভালো করে নিতে পারতো। এই সুবিধা থাকবে না।

অসুবিধা হলো, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় কিছু টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জ আছে। কারণ দুইটি পরীক্ষার জন্য আগে দুই রকম প্রশ্নপত্র হতো, আলাদা করে দুইটি বিকল্প দেওয়ার সুযোগ থাকতো।’

বর্তমানে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৩৭টি, ডেন্টাল কলেজ আছে একটি (ঢাকা ডেন্টাল কলেজ) এবং ডেন্টাল ইউনিট আছে আটটি। সব মিলিয়ে মোট ৪৬টি প্রতিষ্ঠান। এখন প্রশ্ন হলো, এই ৪৬টি প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে নেওয়া হবে, কীভাবে শিক্ষার্থীরা চয়েস দেবে—এসব নিয়ে কিছু টেকনিক্যাল ইস্যু আছে।

এ নিয়ে বৈঠকের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মিটিংয়ে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট যেমন বুয়েট ও টেলিটক প্রতিনিধি, যারা পরীক্ষাগুলোতে সাপোর্ট দিয়ে থাকেন, তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, টেকনিক্যালি এটি মোকাবিলা করা যাবে। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো নিয়ে কাজগুলো চলছে।

শিক্ষার্থীর কলেজ বাছাই যেভাবে

আবেদন প্রক্রিয়ার বিষয়ে অধ্যাপক নাজমুল জানান, টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে আলোচনায় যা এসেছে তা হলো, যেহেতু পরীক্ষা একটি, তাই চয়েস দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি অপশন থাকবে।

শুধু এমবিবিএস অপশন দিলে কেবল সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজের তালিকা আসবে, সেখান থেকে তিনি পছন্দক্রম অনুযায়ী চয়েস দিতে পারবেন।

শুধু বিডিএস অপশন দিলে একটি ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও আটটি ডেন্টাল ইউনিটসহ মোট ৯টির তালিকা আসবে, সেখান থেকে চয়েস দিতে হবে।

উভয় অপশন, অর্থাৎ এমবিবিএস ও বিডিএস দিলে একটি জয়েন্ট তালিকা আসবে, যেখানে ৩৭টি মেডিকেল কলেজ, একটি ডেন্টাল কলেজ এবং আটটি ডেন্টাল ইউনিটসহ মোট ৪৬টি অপশন থাকবে। তখন তাকে এক থেকে ৪৬ পর্যন্ত পছন্দক্রম অনুযায়ী সিলেকশন দিতে হবে।

এই অনুযায়ী, ফলাফলের ভিত্তিতে তার চয়েস অনুযায়ী যেটা প্রাপ্য হবে, সেটাই তিনি পাবেন।

কেমন হবে মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্ন

মানবিক মূল্যবোধের প্রশ্নের ধরন বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহারিচালক বলেন, ‘আমাদের যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়, তা এখনো অনেকটা মুখস্থবিদ্যা-নির্ভর। বর্তমানে পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্ন থাকে, প্রতিটি প্রশ্নে চারটি অপশন থাকে এবং সেখান থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত উত্তরটি বেছে নিতে হয়। এর বেশিরভাগ প্রশ্নই স্মৃতি-নির্ভর, যদিও কিছু বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন থাকে। তবে তার সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।’

‘এই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রায় ১৪-১৫টি দেশের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করেছি। এ নিয়ে আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে একাধিক ওয়ার্কশপ ও বৈঠক করেছি। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই আমরা চিন্তা করেছি, সময় এসেছে কিছু পরিবর্তন আনার। কারণ শুধুমাত্র মুখস্থবিদ্যায় পারদর্শীরা যেন পরীক্ষায় বাড়তি সুবিধা না পান। আমরা চাই বিশ্লেষণী ক্ষমতা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাও মূল্যায়নের সুযোগ পায়।’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ইচ্ছা, এমন প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করার, যাতে পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন। সেই সঙ্গে, কার ব্যক্তিগত মনোভাব কেমন, কে মানবিকভাবে অধিক সংবেদনশীল—সেসবও কিছুটা যাচাই করার সুযোগ থাকে। ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের মধ্যে কীভাবে এই মানবিক গুণাবলী, ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্লেষণী দক্ষতা মেশানো যায়, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে অধিদপ্তর। সে অনুযায়ী, এবারের পরীক্ষায় কিছু নতুন উপাদান সংযোজন করা হবে।

পূর্বের বছরগুলোর মান বণ্টন ও প্রশ্ন পদ্ধতি

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ‘আমাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নম্বর বণ্টনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হবে। আগের বছরগুলোতে বিষয়ভিত্তিক নম্বর বণ্টনে বায়োলজিতে ৩০, কেমিস্ট্রিতে ২৫, ফিজিক্সে ২০, ইংরেজিতে ১৫, সাধারণ জ্ঞানে ১০ নম্বর থাকতো এবং আগে সাধারণ জ্ঞানে ব্যক্তি বা রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন থাকলেও গত বছর থেকে এই ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সাধারণ জ্ঞান প্রশ্ন দেওয়া হচ্ছে।’

এ বছর যেমন হবে

এ বছর অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাধারণ জ্ঞান, মানবিক গুণাবলি, ব্যক্তিত্বমূলক দিক ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা—এই চারটি মিলে ১৫ নম্বর থাকবে। তবে ফিজিক্সে নম্বর ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হবে। অর্থাৎ এ বছরের নতুন নম্বর বণ্টন হবে বায়োলজিতে ৩০, কেমিস্ট্রিতে ২৫, ফিজিক্সতে ১৫, ইংরেজিতে ১৫ এবংসাধারণ জ্ঞান, মানবিক মূল্যবোধ ও বিশ্লেষণী দক্ষতায় ১৫ নম্বর থাকবে।

সহজ প্রশ্ন, কাজ বুদ্ধি খাটানোর

প্রশ্নের মানের ব্যাপারে অধ্যাপক নাজমুল শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘প্রশ্ন সহজ থাকবে, তবে বুদ্ধি খাটাতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, একটি বা দুটি প্রশ্ন দিয়ে নয়, সম্পূর্ণ ১০০টি প্রশ্ন মিলিয়ে একজন শিক্ষার্থীর সমগ্র যোগ্যতা মূল্যায়ন করা। আমাদের বিশ্বাস, কেউ হয়তো ইংরেজিতে ভালো, কেউ রসায়নে, কেউ বা জীববিজ্ঞানে। সবার মেধা ও দক্ষতা মিলে একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন হওয়াটাই হলো সঠিক পদ্ধতি।’

‘তাই আমরা চাই, এই নতুন অংশ, যেখানে সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি মানবিক ও বিশ্লেষণী দক্ষতার বিষয়গুলো থাকবে। এখানে যে ভালো করবে, সে সব কিছুতে এগিয়ে যাবে। এটাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং সে অনুযায়ীই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে’—যোগ করেন অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন।
সূত্র : মেডিভয়েস

Leave A Reply

Your email address will not be published.