Take a fresh look at your lifestyle.

শেবাচিম হাসপাতালের সামনে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট ভেঙে দিলেন পরিচালক

497

নিজস্ব প্রতিবেদক :

এবার বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল চত্বর থেকে উৎখাত করা হয়েছে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্যখাত সংস্কার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের ২২তম দিনে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর অবৈধ এ সিন্ডিকেট উৎখাত করেন। এমনকি হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিংয়েও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তিনি। সেই সাথে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের জন্য রোগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে জরুরি বিভাগে। এ জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার তালিকা এবং জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স পেতে চালু করা হয়েছে হট লাইন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে খুশি রোগী এবং তাদের স্বজনরা। তারা বলছেন, রোগী বা তাদের স্বজনরা এখন নিজেদের ইচ্ছেমতো অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে পারবেন। বন্ধ হবে হয়রানি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে রোগীদের ভোগান্তি বাড়বে বলে মনে করছেন বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।

জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালে বৈধ এবং অবৈধ মিলিয়ে প্রায় একশত অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। যার মধ্যে ২০টির মত মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্সে রূপান্তর করে অবৈধভাবে রোগী পরিবহণ করা হচ্ছে। বৈধ এবং অবৈধ অ্যাম্বুলেন্সের সমন্বয়ে হাসপাতাল চত্বরেই গড়ে তোলা হয় অবৈধ সিন্ডিকেট। সূত্র জানিয়েছে, বছরের পর বছর ধরেই হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য চলছে । সিন্ডিকেটের কারণে একাধিকবার ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের আড়ালে গড়ে ওঠে মাদক সেবন এবং বেচাকেনা। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উলটো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই সরকারি জমিতে অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড বানিয়ে দেন হাসপাতালের তৎকালীন প্রশাসন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয় রোগী এবং স্বজনদের। তারা জানান, ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সে বরিশাল থেকে রোগী নিয়ে গেলে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩-৪ হাজার টাকা। অথচ সিন্ডিকেটের বাধায় ঢাকা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলো হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতেই পারে না। রোগী বা তাদের স্বজনদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে রোগী বহন করতে হলেও সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন। না দিলে শেবাচিম হাসপাতালের সিন্ডিকেটের কাছ থেকেই সর্বনি¤œ ১১-১২ হাজার টাকায় বাধ্যতামূলক অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হয়। না হলে রোগীর প্রাণ গেলেও চলবে না অ্যাম্বুলেন্স।

সম্প্রতি স্বাস্থ্যখাত সংস্কার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রজনতা। চলমান এই আন্দোলনের ২২তম দিনে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যান হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর। গত মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মাত্র আধাঘণ্টার মৌখিক নোটিশে হাসপাতাল চত্বর থেকে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট উৎখাত করেন। তিনি জানিয়েছেন, বেসরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করতে পারবে না। রোগী নিয়ে আসলে তাদের নামিয়ে দিয়ে দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করতে হবে। হাসপাতাল অভ্যন্তরে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করে রোগী ধরতে পারবে না বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স। এর বিপরীতে সরকারি ৭টি অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং করা হয়েছে জরুরি বিভাগের কাছে। পাশাপাশি সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া তালিকা টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে জরুরি বিভাগে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বরিশাল সিটির মধ্যে যেখানেই যাক ভাড়া ৩০০ টাকা। এছাড়া সিটির বাইরে গেলে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হবে রোগীদের। সরকারি যা বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের তুলনায় কয়েকগুণ কম। রোগী ও স্বজনরা হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পেতে ০১৭৮২৭৫৫৫০০ নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. একেএম মশিউল মুনীর জানিয়েছেন, রোগীদের ভোগান্তি বা জিম্মি করে কোনো সিন্ডিকেট চলবে না। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের বিরুদ্ধে অনেক দিন থেকেই নানা ধরনের অভিযোগ পাচ্ছিলেন তিনি। এ কারণে হাসপাতাল চত্বর থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স বের করে দিয়ে স্ট্যান্ডের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনো অ্যাম্বুলেন্স চালক বা মালিক নির্দেশনা উপেক্ষা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন পরিচালক।

Leave A Reply

Your email address will not be published.