Take a fresh look at your lifestyle.

ওষুধের কাঁচামাল এপিআই শিল্পের উন্নয়নে স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের

১১৭

হেলথ ইনফো ডেস্ক :
ওষুধের কাঁচামালের (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট, এপিআই) বড় অংশই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ওষুধের দাম কমানো সম্ভব হয় না। এ পরিস্থিতিতে এপিআইয়ের আমদানি কমিয়ে দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে এই আলোচনার আয়োজক ছিল অ্যালায়েন্স ফর হেলথ রিফর্মস, বাংলাদেশ (এএইচআরবি)।

‘এপিআই শিল্পের উন্নয়নে নীতি ও বাস্তবায়ন কৌশল’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নেন ওষুধ শিল্পসমিতির নেতা, ফার্মাকোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এ সময় বিশেষজ্ঞরা জাতীয় নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে এপিআই শিল্পকে শক্তিশালী ভিত্তিতে দাঁড় করাতে সুস্পষ্ট কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেন। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নে একটি স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও দেন তাঁরা।

সভায় সঞ্চালনা করেন বিএমইউর ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও এএইচআরবির আহ্বায়ক ডা. সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল উৎপাদন বাড়লে ওষুধ সরবরাহব্যবস্থা আরও স্থিতিশীল হবে, উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং দাম সাধারণ মানুষের নাগালে থাকবে।

তিনি প্রস্তাব দেন, এপিআই শিল্পে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা, স্বল্পসুদের ঋণ ও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালুর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

ডা. হামিদ আরও বলেন, ভারত ও চীনের মতো বাংলাদেশেও এই খাতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবন উৎসাহিত করতে গবেষণা অনুদান এবং আন্তর্জাতিক মান রক্ষায় কমপ্লায়েন্স গ্রান্ট চালুরও সুপারিশ করেন তিনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর ওষুধ শিল্পে প্রতিযোগিতা বাড়বে। সেই পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে হলে স্থানীয়ভাবে এপিআই উৎপাদনের বিকল্প নেই।

তাঁরা বলেন, সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া গেলে বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যেই ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে আত্মনির্ভর হতে পারবে।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পসমিতির (বাপি) মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন বলেছেন, এপিআই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে বাস্তবসম্মত নীতিগত সহায়তা দিতে হবে, শুধু কমিটি গঠন করে হবে না।

তিনি বলেন, গত দেড় মাসে সরকারের যত কমিটি হয়েছে, সেখানে বাপি বা এপিআই শিল্পের কোনো প্রতিনিধিত্বই রাখা হয়নি। অথচ এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত অপরিহার্য।

ডা. জাকির হোসেন আরও বলেন, “আমাদের দেশে এপিআইয়ের কাঁচামাল এখনো চীন ও ভারত থেকে আসে। কিন্তু সেখানে এমন দামে র মেটারিয়াল আনা সম্ভব নয়, যাতে আমরা তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারি। সরকার যদি নীতিগতভাবে সাপোর্ট না দেয়, তাহলে এ শিল্প কখনোই টেকসই হবে না।

তিনি অভিযোগ করেন, এপিআই পার্কে জমির দাম আমরা পরিশোধ করেছি, কিন্তু সেই টাকার কোনো রিটার্ন পাচ্ছি না। ২০১৮ সালে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও বলা হচ্ছে ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ সংযোগ আসবে। সরকারের পক্ষ থেকে জমির দাম ও ইন্টারেস্ট নেওয়া হলেও অবকাঠামোগত সুবিধা এখনো অনিশ্চিত।

বাপির মহাসচিব বলেন,এপিআই শিল্প পার্কে স্টেকহোল্ডারদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যাঁরা কমিটিতে আছেন, তাঁরা কি কখনো আমাদের ব্যথা বুঝবেন? প্রশাসনিক জটিলতা মেটাতে হবে, না হলে প্লট হস্তান্তর, প্লট বিনিময় বা নেশাজাতীয় পদার্থের অনুমোদন–সব জায়গায় সময়ের অপচয়ই হবে।

সভায় ওষুধের কাঁচামাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোর্চা বাংলাদেশ এপিআই অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বিএআইএমএর সভাপতি সাইফুর রহমান বলেন, আমাদের ভারত ও চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় তাদের এপিআই শিল্প সম্প্রসারণের কৌশল ভালোভাবে বুঝা দরকার। ভারত তাদের এপিআই শিল্প সম্প্রসারণের স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তাদের মধ্যে আমাদের দেশে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একটি স্থায়ী টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।

বাপির কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, সরকারের উৎসাহে ৪৯০ কোটি টাকা লোন নিয়ে ২ বছর আগে এপিআই পার্কে কারখানা স্থাপন করছি। এখন প্রতিদিন ২০ লাখ টাকা সুষ দিতে হচ্ছে। তবে এখন সরকার থেকে বলছে গ্যাস পাওয়া যাবে না। এই অবস্থায় আমার পর আর কোনো পাগল এখানে আসবে এপিআই পার্ক করতে।

স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন সদস্য ও বিজ্ঞানী (আইসিডিডিআরবি) ড. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, এপিআই শিল্পের ৯০ ভাগ সমস্যা কথা আমার জানি। গত এক যুগ থেকে এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তবে উত্তরণ হচ্ছে না। আগে এপিআই নিয়ে সরকার ও কোম্পানিগুলোর দর্শন ঠিক করতে হবে।

সভার এক পর্যায়ে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বক্তারা বাপিকে পরামর্শ দেন, এপিআই উৎপাদনে সৃষ্ট সংকট সমাধানে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করার।

Leave A Reply

Your email address will not be published.